tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ২৭ মার্চ ২০২৪, ০৮:৫০ এএম

গাজায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা ‘অত্যধিক বেশি’: যুক্তরাষ্ট্র


lloyd-austin-1-20240327091504

টানা সাড়ে পাঁচ মাস ধরে ফিলিস্তিনের গাজায় আকাশ ও স্থলপথে হামলা করে চলেছে ইসরায়েল। নিরলস ও নির্বিচার এই হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহত এসব ফিলিস্তিনিদের মধ্যে বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।


আর এই বিষয়টি নিয়ে আবারও সরব হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বলেছে, গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা ‘অত্যধিক বেশি’। বুধবার (২৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকায় বেসামরিক মৃত্যুর সংখ্যা ‘অনেক বেশি’ বলে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে জানিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ যুদ্ধ-বিধ্বস্ত এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করার একদিন পরে গ্যালান্টকে একথা জানালেন তিনি।

রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে মঙ্গলবার গ্যালান্টের সাথে বৈঠকের শুরুতে বক্তৃতাকালে অস্টিন বলেন, গাজায় পৌঁছানো মানবিক সহায়তার পরিমাণও ‘খুব কম’।

মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের এই প্রধান আরও বলেন, ‘গাজা মানবিক বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। এবং দুর্ভিক্ষ এড়ানোর জন্য আমাদের অবিলম্বে সহায়তা বৃদ্ধির প্রয়োজন এবং সমুদ্রপথে অস্থায়ী মানবিক করিডোর খোলার জন্য আমাদের কর্মকাণ্ড এই কাজকে সাহায্য করবে। কিন্তু মূল বিষয় হলো- স্থলপথে সাহায্য বিতরণ আরও প্রসারিত করা।’

আল জাজিরা বলছে, ইসরায়েল গাজায় অতীব জরুরি মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। এতে করে ফিলিস্তিনি এই ভূখণ্ড ‘দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতির’ সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জাতিসংঘসহ অনেকেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এমন এক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে সফরে এসেছেন যখন জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গত সোমবার গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে একটি প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে। মূলত গত বছরের অক্টোবরের শুরুতে ইসরায়েলের আগ্রাসন শুরুর পর থেকে গাজায় ৩২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

মূলত গত সোমবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসলামিক পবিত্র মাস রমজানে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করে। পবিত্র এই মাসটি মধ্যপ্রাচ্যে গত ১১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে এবং আগামী ৯ এপ্রিল শেষ হতে পারে।

কাউন্সিলের ১০ জন নির্বাচিত সদস্যের উপস্থাপিত এই রেজোলিউশনের পক্ষে ১৪টি দেশ ভোট দেয়। অন্যদিকে সেখানে একমাত্র দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ভোটদান থেকে বিরত ছিল। এছাড়া প্রস্তাবটির বিপক্ষে কোনো যুক্তি উপস্থাপন বা ভেটো ক্ষমতারও প্রয়োগ করেনি পরাশক্তি এই দেশটি।

আল জাজিরা বলছে, সোমবারের ভোটাভুটিতে যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ব্যবহার করার পরিবর্তে সেখানে ভোটদান থেকে বিরত ছিল, আর এটি কার্যত এমন একটি পদক্ষেপ যা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ইসরায়েলি নেতৃত্বের প্রতি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের হতাশাই তুলে ধরেছে এবং ইসরায়েলি এই নেতৃত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুও রয়েছেন।

অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র ওই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো ক্ষমতা ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার পর নেতানিয়াহু ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের সফর বাতিল করেন।

মঙ্গলবার নেতানিয়াহুর কার্যালয়য় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রেজুলেশন পাসের অনুমতি দেওয়ার মার্কিন এই সিদ্ধান্ত ‘যুদ্ধের শুরু থেকে নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক অবস্থান থেকে স্পষ্ট পশ্চাদপসরণ।’

অবশ্য ওয়াশিংটন জাতিসংঘের প্রস্তাবে ভেটো দিতে ব্যর্থ হলে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী এর আগেই প্রতিনিধিদলের সফর বাতিল করার হুমকি দিয়েছিলেন।

গাজায় সম্প্রসারিত মানবিক সহায়তার জন্য মার্কিন প্রস্তাবের পাশাপাশি দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে ইসরায়েলের পরিকল্পিত স্থল হামলার বিষয়ে বিকল্পগুলো শুনতে ইসরায়েলি এই প্রতিনিধিদলের ওয়াশিংটন সফর করার কথা ছিল।

এদিকে মার্কিন এবং ইসরায়েলি মিডিয়া আউটলেটগুলো জানিয়েছে, ইসরায়েলকে আরও দ্রুত অস্ত্র সরবরাহের অনুরোধ করতে ওয়াশিংটন সফরে গেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।

ইসরায়েলের এই প্রতিরক্ষামন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, তিনি অস্টিনের সাথে তার বৈঠকে ‘ইসরায়েলের সামরিক শক্তি এবং সক্ষমতা নিশ্চিত করতে’ মার্কিন-ইসরায়েল সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করার পরিকল্পনা করেছেন।

অবশ্য গাজায় ইসরায়েলের নীতির বর্ধিত সমালোচনা সত্ত্বেও মার্কিন কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলেছেন, তারা ইসরায়েলকে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র সরবরাহ করতে থাকবে। গত সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, তারা ইসরায়েলের কাছ থেকে ‘বিশ্বাসযোগ্য’ আশ্বাস পেয়েছে যে, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে মার্কিন অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে না।

যদিও এই মূল্যায়ন ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সমর্থকদের ক্ষুব্ধ করেছে এবং তারা ইসরায়েলকে সংঘাতে ব্যাপক নিয়ম লঙ্ঘন এবং গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছে।

মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার সাংবাদিকদের বলেন, গাজায় ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা সে বিষয়ে বাইডেন প্রশাসন এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি। কিন্তু এগুলো এমন প্রক্রিয়া যা খুব চলমান।

এনএইচ