tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
আন্তর্জাতিক প্রকাশনার সময়: ০৫ মার্চ ২০২৪, ০৮:২০ এএম

গাজার শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা


gaza-6-20240305081022
দক্ষিণ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে খাবার নেওয়ার চেষ্টা করছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। ছবিটি ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তোলা

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই ভেঙে পড়েছে।


এরসঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। পরিস্থিতি এতোটাই অমানবিক যে, গাজার উত্তরাঞ্চলের শিশুরা মারা যাচ্ছে অনাহারে। এমন তথ্যই জানিয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।

এমনকি গাজার শিশুরা গুরুতর মাত্রায় অপুষ্টির শিকার হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার (৫ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, গত বছরের অক্টোবরে সংঘাত শুরুর পর থেকে এই সপ্তাহান্তে প্রথমবারের মতো আল-আওদা এবং কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরিদর্শন করে তার সংস্থাটি।

পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া একটি পোস্টে হাসপাতাল পরিদর্শনের পর তিনি ‘গুরুতর ফলাফল’ পাওয়ার কথা বলেন। পোস্টে টেড্রোস লিখেছেন, খাবারের অভাবের ফলে ১০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং গাজার শিশুরা ‘গুরুতর মাত্রায় অপুষ্টির’ শিকার হয়েছে। হাসপাতাল ভবনগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ১৫ শিশু মারা গেছে। ফিলিস্তিনের সরকারি বার্তাসংস্থা ওয়াফা সোমবার জানিয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি হাসপাতালে রোববার ১৬তম শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস বলছেন, উত্তর গাজায় মারাত্মক মাত্রায় অপুষ্টি রয়েছে, শিশুরা অনাহারে মারা যাচ্ছে, জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহের গুরুতর ঘাটতি রয়েছে এবং হাসপাতাল ভবনগুলোও ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। গাজার এই অঞ্চলে আনুমানিক ৩ লাখ মানুষ খুবই অল্প খাদ্য বা বিশুদ্ধ পানি নিয়ে বসবাস করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া ওই পোস্টে তিনি আরও বলেছেন, ‘খাদ্যের অভাবে ১০ জন শিশুর মৃত্যু হয়েছে।’

তিনি লিখেছেন, ‘গাজার উত্তরাঞ্চলে আরও নিয়মিত যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার জন্য আমাদের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও গত কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ডব্লিউএইচওর প্রথম সফর ছিল এটিই। আল-আওদা হাসপাতালের পরিস্থিতি বিশেষভাবে খুবই ভয়াবহ, সেখানকার একটি ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে।’

এর আগে জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বলেছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ ‘প্রায় অনিবার্য’। জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সতর্ক করে বলেছেন, গাজা উপত্যকাজুড়ে কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ - যা ভূখণ্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ - বিপর্যয়কর মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন এবং গাজার উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয়জন শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে।

জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক বলেছেন, ‘আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা এখানে বিদ্যমান রয়েছে। অপুষ্টি গাজা উপত্যকাকে ধ্বংস করছে।’

মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘গাজার অবশিষ্ট যে কয়েকটি হাসপাতাল চালু আছে তার মধ্যে কোথাও কোথাও সম্ভবত আরও বেশি শিশু তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে এবং ভূখণ্ডটির উত্তরাঞ্চলে সম্ভবত আরও বেশি শিশু সঠিক যত্ন ও পরিষেবা পাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘এই মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ মৃত্যু মানবসৃষ্ট, পূর্বাভাসযোগ্য এবং সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।’

জাতিসংঘের এই সংস্থার তথ্য অনুসারে, প্রায় ১৬ শতাংশ বা দুই বছরের কম বয়সী প্রতি ছয়জন শিশুর মধ্যে একজন উত্তর গাজায় তীব্রভাবে অপুষ্টিতে ভুগছে। অ্যাডেল খোদর সতর্ক করে বলেন, ‘এখন, আমরা যে শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা করছিলাম তা এখানে বিদ্যমান রয়েছে এবং যুদ্ধ শেষ না হলে ও মানবিক ত্রাণ বিতরণে প্রতিবন্ধকতাগুলো অবিলম্বে সমাধান করা না হলে তা (শিশু মৃত্যু) দ্রুত বাড়তে পারে।’

উল্লেখ্য, গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের ফলে এখন পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৭১ হাজার ৯৮০ জন।

এদিকে ইসরায়েল গাজার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে রেখেছে এবং এই পদক্ষেপ গাজার ফিলিস্তিনিদের বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের অনাহারের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে।

এনএইচ