হিজবুল্লাহর নতুন নেতা আলোচনায় হাসেম সাফিয়েদ্দিন
Share on:
দক্ষিণ বৈরুতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় লেবাননের ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হয়েছেন।
১৯৯২ সালে তৎকালীন হিজবুল্লাহর নেতা আব্বাস আল-মুসাভি নিহত হওয়ার পর, মাত্র ৩২ বছর বয়সে নাসরুল্লাহ সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন।
শনিবার তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে হিজবুল্লাহ জানায়, হিজবুল্লাহর সেক্রেটারি জেনারেল সাইয়্যেদ হাসান নাসরুল্লাহ তার মহান, অমর শহিদ কমরেডদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তিনি তাদেরকে প্রায় ৩০ বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন'।
শেখ হাসান নাসরুল্লাহ লেবাননের সশস্ত্র শিয়া ইসলামিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর প্রধান নেতা এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম পরিচিত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব। ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করা নাসরুল্লাহ বৈরুতের পূর্ব বুর্জ হামমুদ এলাকায় বেড়ে ওঠেন। তার বাবা আব্দুল করিমের নয় সন্তানের মধ্যে তিনি-ই ছিলেন সবার বড়।
লেবাননে ১৯৭৫ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নাসরুল্লাহ আমাল আন্দোলনে যোগ দেন এবং পরে একটি শিয়া মিলিশিয়া বাহিনীতে অংশ নেন।
১৯৮৫ সালে হিজবুল্লাহ একটি 'খোলা চিঠি' প্রকাশ করে তাদের প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে ইসলামের প্রধান শত্রু হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং মুসলিম ভূমি দখল করার অভিযোগে ইসরায়েলের বিলুপ্তির জোর দাবি জানানো হয়।
১৯৯২ সালে ইসরায়েলি হেলিকপ্টার হামলায় হিজবুল্লাহর তখনকার নেতা আব্বাস আল-মুসাভি নিহত হওয়ার পর, মাত্র ৩২ বছর বয়সে নাসরুল্লাহ সংগঠনটির নেতৃত্বে আসেন।
ইসরায়েলের ক্রমাগত হামলা ও কমান্ডারদের মৃত্যুর কারণে হিজবুল্লাহ আগে থেকেই নেতৃত্ব সংকটে ছিল। তবে নাসরুল্লাহর মৃত্যুর পর সংগঠনটির ভেতরে এখন বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। একদিকে ইসরায়েলের হামলা এবং অন্যদিকে নেতৃত্বশূন্য হিজবুল্লাহ এখন কঠিন সময় পার করছে।
নাসরুল্লাহর মৃত্যু শুধু একজন নেতার বিদায় নয় বরং একজন ব্যক্তিত্বের প্রস্থান, যিনি লেবাননের শিয়া জনগোষ্ঠীর জন্য এক বড় প্রতীক ছিলেন।
দীর্ঘ সময় ধরে হিজবুল্লাহর দায়িত্ব থাকা তার মতো একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিকল্প খুঁজে পাওয়া হিজবুল্লাহর জন্য বেশ কঠিন হবে, বিশেষ করে ইসরায়েলের হামলার ঝুঁকি এবং দক্ষিণ লেবাননে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের সময়ে।
তবে নাসরুল্লাহর উত্তরসূরি হিসেবে দু'জন শীর্ষ নেতা আলোচনায় রয়েছেন। তারা হলেন— হাসেম সাফিয়েদ্দিন এবং নাঈম কাসেম। তাদের সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
হাসেম সাফিয়েদ্দিন নাসরুল্লাহর চাচাতো ভাই এবং হিজবুল্লাহর নির্বাহী পরিষদের প্রধান সাফিয়েদ্দিনকে পরবর্তী প্রধান বা সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
১৯৬৪ সালে দক্ষিণ লেবাননের দেইর কুনুন এন-নাহর গ্রামে জন্ম নেওয়া সাফিয়েদ্দিন, নাসরুল্লাহর সাথে ইরাক ও ইরানের ধর্মীয় কেন্দ্রে পড়াশোনা করেছেন। তারা একসাথে হিজবুল্লাহর শুরুর দিকে যোগ দেন।
সাফিয়েদ্দিনের পরিবারের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে, আর তার ভাই ইরানে হিজবুল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। সাফিয়েদ্দিনের ইরানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে; তার ছেলে বিয়ে করেছেন কাসেম সোলাইমানির মেয়েকে, যিনি ২০২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় নিহত হন।
সাফিয়েদ্দিন হিজবুল্লাহর শুরা পরিষদ এবং জিহাদি কাউন্সিলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই কারণে তিনি ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং সৌদি আরব তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং তার সম্পদ জব্দ করেছে।
নাঈম কাসেম : ৭১ বছর বয়সী নাঈম কাসেম হিজবুল্লাহর ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল এবং অনেকেই তাকে সংগঠনটির দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে মনে করেন।
নাবাতিয়েহ প্রদেশের কফার কিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করা নাঈম কাসেম বারবার ইসরায়েলি হামলার শিকার হয়েছেন।
১৯৭০-এর দশকে তিনি ইমাম মুসা আল-সাদরের প্রতিষ্ঠিত 'মুভমেন্ট অব দ্য ডিসপোসেসড' এ যোগ দেন, যা পরে লেবাননের শিয়া সংগঠন আমাল মুভমেন্টের অংশ হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি আমাল ত্যাগ করে ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে হিজবুল্লাহ গঠনে সহায়তা করেন এবং সংগঠনটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ধর্মীয় পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত হন।
কাসেম হিজবুল্লাহর শিক্ষামূলক কার্যক্রম এবং সংসদীয় বিষয়গুলোতেও ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৯১ সালে তিনি ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত হন এবং দীর্ঘকাল ধরে সংগঠনটির হয়ে কাজ করছেন।
২০০৫ সালে তিনি হিজবুল্লাহ : দ্য স্টোরি ফ্রম উইথিন' নামে একটি বই লিখেছিলেন, যা পরে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়।
এসএম