tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
রাজনীতি প্রকাশনার সময়: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:৫৭ পিএম

ইতিহাস বিকৃতিকারী অপরাধীদের চিহ্নিত করা সময়ের দাবি : মিয়া গোলাম পরওয়ার


815611_117

ইতিহাস বিকৃতিকারী অপরাধীদের চিহ্নিত করা সময়ের দাবি হয়ে দাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল, সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।


মঙ্গলবার(২০ ফেব্রয়ারি) দুপুরে রাজধানীর স্থানীয় মিলনায়তনে শহীদ দিবস ও আর্ন্তজাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসকে সঠিকভাবে সামনে আসতে দেয়া হয়নি। বারবার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে, ইতিহাস ছিনতাই করা হয়েছে। আজকে এই প্রজন্মের দায়িত্বই হলো ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সঠিক ইতিহাসকে তুলে ধরা।

তিনি বলেন, আজকে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদী সরকার আমাদের সমস্ত অধিকারের টুটি চেপে ধরে, অধিকারকে পদদলিত করতে চায়। ভাষা আন্দোলনের শিক্ষাকে ধারণ করে, দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে সমস্ত জুলুম অত্যাচার, কর্তৃত্ববাদী সরকারের বিরুদ্ধে অকুতোভয় ও নির্ভীকভাবে আন্দোলন এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সাহসী, দেশপ্রেমিক, বীর পুরুষদের ঐতিহাসিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় সাফল্যের গৌরব গাথার দিন একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের দিন।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, যে কোনো জাতির সভ্যতা নির্মানে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, দেশপ্রেমিক সাহসী পুরুষরা ইতিহাস রচনা করে যায়। ভাষার জন্য যারা সংগ্রাম করেছেন, তাদের প্রায় সকলেই ছিলেন মুসলিম ছাত্রনেতা। অধ্যাপক গোলাম আযম, প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম, দেওয়ান মুহাম্মদ আজরফ, নুরুল হক ভুইয়া, মওলানা আকরাম খান তারা সকলেই মুসলিম ছিলেন। পরবর্তীতে কিছু ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বিদেশী মতবাদের ধারক বাহকরা আন্দোলনের মধ্যে ঘাপটি মেরে, এই আন্দোলনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এমনকি ভাষা আন্দোলনে যারা জীবন দিয়েছিলেন, তারা সবাই মুসলমান ছিলেন। তাদের স্মরণতো তাদের সংস্কৃতিতেই তা পালিত হওয়া উচিৎ ছিল। কিন্তু তা না করে অপসংস্কৃতি আমদানি করে, ইসলামী আকিদা বিরোধী ধারা তৈরি করে, তাদের স্মারণ করার ধারা চলছে। যার সাথে শিরক জড়িত।

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস আলোচনা করতে গেলেই অধ্যাপক গোলাম আযমের কথা সামনে আসবে। ১৯৮৬-৪৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফজলুল হক মুসলিম হলে ছাত্র নেতা হিসেবে তিনি নির্বাচিত জিএস ছিলেন। তারপর ১৯৪৭-৪৮, ১৯৪৮-৪৯ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসুর জিএস ছিলেন। ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত তিনি সকল আন্দোলন, সংগ্রামে ছাত্র নেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, যখন পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশে আসলেন, তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের পক্ষ থেকে সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছিলেন ডাকসুর তৎকালীন জিএস অধ্যাপক গোলাম আযম। যার ড্রাফট তৈরি করেছিলেন, সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতা আবদুর রহমান চৌধুরী। পরবর্তীতে তিনি বিচারপতি হয়েছিলেন। এক সাক্ষাতকারে এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছিলেন।

তিনি বলেন, সেই স্মারকলিপিতে ভাষার কথা, এই অঞ্চলের মানুষের অধিকারের কথা, আধুনিক জাতি গঠনে শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা, অর্থনৈতিক বিষয়সহ সব বিষয় উল্লেখ ছিল।

অধ্যাপক পরওয়ার উল্লেখ করেন, ভারত-পাকিস্তান আলাদা হওয়ার পর এই দেশের মানুষের পক্ষে প্রথম কথাই বলে অধ্যাপক গোলাম আযমের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। আজও ২১ নিয়ে এতো আলোচনা হয়, কখনই সঠিক ইতিহাসটা মানুষের সামনে তুলে ধরা হয় না। এটাতো ইতিহাসের অংশ। এই ইতিহাস ছিনতাই করার সুযোগ নেই। অথচ অধ্যাপক গোলাম আযম যে ঢাকসুর জিএস ছিলেন, সেটা ঢাকুসর ভিপি জিএস এর তালিকায় থাকবে না? এগুলো মুছে দিয়ে, তারা আবার একুশের বিশাল ফেরীওয়ালা হয়ে জাতির নেতৃত্বের আসনে প্রচার করে।

তিনি আরো বলেন, যুগে যুগে এমন কিছু লোক আন্দোলনের মাঝখানে এসে হানা দেয়, ইতিহাস বিকৃত করে এবং নিজেরা নিজেদের স্বার্থে, দলীয় কোটারি স্বার্থে একটা সত্য আন্দোলনকে বিপথে ধাবিত করে। অধ্যাপক গোলাম আযম দীর্ঘ দিন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ছিলেন, তিনি মজলুম ছিলেন, তার নাগরিকত্ব হরণ করা হয়েছিল, তাকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল, কিন্তু এদেশের মানুষ আইনী লড়াই করে, রাজপথে সংগ্রাম করে, শাহাদাতের নজরানা পেশ করে, সর্বোচ্চ আদালত থেকে তার নাগরিকত্ব ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস যারা বিকৃতি করছেন, তারা সঠিক কাজটি করছেন না। দেশ গঠন, স্বাধীনতা, ভাষা, গণঅভুত্থান, স্বৈরাচার বিরোধী, ফ্যাসিবাদ বিরোধী যত আন্দোলন হয়েছে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সঠিক ইতিহাস ধরে রাখার, আন্দোলনকে সঠিক ধারায় প্রবাহিত করার জন্য ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে আসছে।

কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলাওয়ার হোসেন ও কামাল হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন, ড. মোবারক হোসাইন, মহানগরীর কর্মপরিষদ সদস্য আবদুস সালাম প্রমুখ।

সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আজকের এই দিনে সকল ভাষা সৈনিকদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য এদেশের সংগ্রামী মুসলিম জনতা ৫২’র ভাষা আন্দোলনে শহীদ হয়েছেন। তারা আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অথচ বর্তমান আওয়ামী সরকার ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাসকে বিকৃত করে জাতির সামনে উপস্থাপন করছে। ৫২ ভাষা আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে দেশে স্বাধিকার আদায় হয়েছে এবং সর্বপরি মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে প্রিয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। বর্তমান সরকার ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে পদদলিত করে দেশের জনগণকে অধিকার বঞ্চিত করে রেখেছে। একুশের চেতনায় শপথ নিতে হবে, জনগনের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আবারো আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমান অবৈধ, ফ্যাসিষ্ট সরকার ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কোনো অধিকার প্রতিষ্ঠা হবে না। এই অপশক্তির হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

আবদুস সবুর ফকির বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলনে যারা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন ওই সব শহীদদের রূহের মাগফেরাত কামনা করছি। ভাষা সেনাপতি প্রিন্সিপ্যাল আবুল কাশেম, অধ্যাপক গোলাম আজম, দেওয়ান মোহাম্মাদ আজরফ, রুহুল হক ভূঁইয়াসহ অন্যান্য ভাষা সৈনিকদের আমরা স্মরণ করছি। আজকে ইতিহাস বিকৃত হয়ে যাচ্ছে, পরিকল্পিত ভাবে তাদেরকে আলোচনায় আনা হচ্ছে না। ভাষা আন্দোলনে যাদের কোনো সম্পর্কই ছিল না, তাদেরকে সামনে আনা হচ্ছে। আর যারা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদেরকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, মহান আল্লাহ আমাদেরকে ভাষা শিখিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে ভাষার অধিকার দিয়েছেন। সকল অধিকার দিয়ে মহান আল্লাহ আমাদেরকে মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। অথচ আজকে এই বাংলাদেশে কথা বলার অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। ভাষার অধিকার মানেই হচ্ছে কথা বলার স্বাধীনতা। তিনি ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার, কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি