আইজিপি বেনজীর আহমেদ সহ র্যাবের ৬ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
Share on:
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব) মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর ৬ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে অযোগ্য বিবেচিত হবেন।
মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার ( ১০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ, উগান্ডা, চীন, বেলারুশ, শ্রীলঙ্কা ও মেক্সিকোর নিরাপত্তা বাহিনীর ১৫ কর্মকর্তা ও ২০ প্রতিষ্ঠানের ওপর এই নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে র্যাবের অন্য যে ৪ কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছেন, তারা হলেন-
অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মুহাম্মদ আজাদ,
সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস, ২৭ জুন ২০১৯ থেকে ১৬ মার্চ ২০২১) তোফায়েল মোস্তোফা সরোয়ার,
সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে ২৭ জুন ২০১৯) মুহাম্মদ জাহাঙ্গির আলম এবং
সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস, ২৮ এপ্রিল ২০১৬ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮) মুহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে এপ্রিল ২০২০ পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং র্যাব-৭ এর সাবেক কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতা উদ্দিন আহমেদ ২০১৮ সালে মে মাসে কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হককে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত।
র্যাব, বেনজির আহমেদ এবং অন্য ৫ কর্মকর্তাকে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এ ব্যাপারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতির কেন্দ্রে মানবাধিকারকে রাখতে বদ্ধপরিকর।
বিশ্বের যেখানেই ঘটুক না কেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০-রও বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।
এ দিকে ডয়েচে ভেলে জানায়, বাংলাদেশ সরকারের মাদকবিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
ফলে আইনের শাসন, মানবাধিকার, বিভিন্ন মৌলিক স্বাধীনতা এবং বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ক্ষুণ্ণ করার মাধ্যমে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ হুমকিতে পড়েছে।
বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে ছয় শতাধিক গুম, ২০১৮ সাল থেকে প্রায় ৬০০ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনে র্যাব ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় রয়েছে।
বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের এইসব ঘটনায় লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছে বলেও কিছু প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮-এর অধীনে বিদেশী সংস্থা হিসেবে র্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মার্কিন রাজস্ব মন্ত্রণালয়।
এ ছাড়াও একই নির্বাহী আদেশের অধীনে নিষেধাজ্ঞায় বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান ছয়জন শীর্ষ কর্মকর্তার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
একই সাথে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকাকালে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মার্কিন নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮ জারি করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এই আদেশের অধীনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনীতি হুমকিতে পড়লে বিদেশী সংস্থা বা ব্যক্তির সম্পদ, সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
এইচএন