বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের তথ্য দেওয়া সংবিধান পরিপন্থি
Share on:
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করার জন্য এই চেষ্টা করছে। এরমধ্যে দিয়ে নাগরিকদের স্পর্শকাতর তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের যে প্রক্রিয়া চলছে সেটি সংবিধান পরিপন্থি কাজ।
শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ভাণ্ডার বেসরকারি খাতে হস্তান্তরের প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন এবং নাগরিক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৪৩ এর (খ) ধারায় নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করার কথা বলা রয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে সরকারের নেওয়া শপথ অনুযায়ী সংবিধান রক্ষা করা তথা নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। গত বছর থেকে আমরা লক্ষ্য করছি সরকারি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে জন্ম নিবন্ধনকারী সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নাগরিকের তথ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে লক্ষ্য করি পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য ভেসে বেড়াচ্ছে এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই যখন নাগরিকের ব্যক্তিত্ব তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না সেই সময় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্যভাণ্ডার গড়তে দেয়া সম্পূর্ণভাবে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে বলে আমরা মনে করছি।
তিনি বলেন, এমন ঘটনার ফলে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। বর্তমানে প্রায় ১৯ কোটি ২৬ লক্ষ সক্রিয় সিম এর তথ্য এম এন ও অপারেটর নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কেবল তথ্য যাচাইয়ের জন্য ৫ টাকা চার্জ দিয়ে থাকে। কিন্তু আমরা গণমাধ্যম এবং অপারেটরদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি এই তথ্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে তাদের গুণতে হবে ১০ টাকা। দিনশেষে এই অতিরিক্ত অর্থ গ্রাহকদের কাছ থেকেই আদায় করা হবে। আর এর মাধ্যমে গ্রাহকদের আরেক দফা খরচ বৃদ্ধি করা হচ্ছে পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।
মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি গত ২৫ জানুয়ারি বিটিআরসি থেকে অপারেটরদের একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি মধ্যে তথ্য ভাণ্ডার তৈরির অগ্রগতি জানাতে হবে। যদিও এখন পর্যন্ত অপারেটররা তথ্য ভাণ্ডার তৈরি করেনি।
তথ্য ভাণ্ডার বেসরকারি খাতে না দেওয়ার জন্য মহামান্য হাইকোর্টে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে রিট পিটিশন দাখিল করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করি আদালত নাগরিকদের তথ্যের নিরাপত্তা এবং সুবিচার করবেন। তবে আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে আমরা বলতে চাই আদালত থেকে যে রায় দেওয়া হবে আমরা সেটি মেনে নিতে বাধ্য। নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য আইন প্রণয়ন এর দাবিতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বিভিন্ন সময় ইতোপূর্বে মানববন্ধন এবং সভা সমাবেশ অনুষ্ঠান প্রতিপালন করেছি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এখানে একটি কথা না বললেই নয়। নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করতে ১৬ ধরনের তথ্য সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে। সংবিধান এবং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও প্রয়োজন অনুসারে সরকারের চাহিদা মাফিক জনগণ সরকারকে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি সময় নির্বাচন কমিশনকে ইতোপূর্বে সব ধরনের তথ্য প্রদান করেছে। যে তথ্য সংরক্ষণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রের বিভিন্ন সরকার নির্দেশিত সেবা সমূহের জন্য নাগরিকের তথ্য উপাত্ত ব্যবহার করা একান্তই সরকারের নির্দেশিত বিষয়। জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য তাই সরকারের কাছে গচ্ছিত রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ আমানত। যা সরকার সংবিধান অনুসারে নিরাপত্তা সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করবেন।
কোনোভাবেই নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ও উপাত্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা যাবে না। একইসঙ্গে যারা এই প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত থাকবেন তারা সংবিধান লঙ্ঘনকারী হিসেবে চিহ্নিত হবেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তানভীর জুহা, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট ইসরাত হাসান, অ্যাডভোকেট সাহিদা বেগম ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক।
এসএম