নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দিন : রিজভী
Share on:
হুংকার বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সোমবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তিনি।
রিজভী বলেন, ‘বিএনপির নাম শুনলেই সরকারপ্রধান আতঙ্কে থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর সহিংস হুংকারে দেশের গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ আতঙ্কিত।
গতকাল রোববার নরসিংদীতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে তিনি তাকে হত্যা করতে চান।
বলতে চাই, যদি সাহস থাকে সন্ত্রাসীদের মতো খিস্তি-খেউড় আর হুংকার বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। ভোটাররাই ফায়সালা করবে। এতই জনপ্রিয় হলে সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় কোথায়?’
তিনি বলেন, ‘গত ২ নভেম্বর শেখ হাসিনা সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতাদের জানোয়ার বলেছেন। গতকাল শেখ হাসিনা আরও অনেক কথা বলেছেন যা মানুষের পক্ষে বলা সম্ভব না।
উনার ‘বাক্যদূষণ’ ইদানীং প্রায় মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। তিনি সব রীতিনীতি, শিষ্টাচার, সুরুচি ও সভ্যতাকে তোয়াক্কা না করে লাগামছাড়া, উসকানিমূলক ভাষায় বক্তব্য রেখেছেন। এটা কি কোনো সভ্য দেশের সরকারপ্রধানের মুখের ভাষা হতে পারে?’
রিজভী আরও বলেন, ‘তারেক রহমানের ক্যারিশমাটিক নেতৃত্ব, অভাবনীয় জনপ্রিয়তা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতায় গড়ে ওঠা প্রত্যয়-দৃঢ় নেতৃত্বে সরকার আতঙ্কিত।
তার নেতৃত্বে এখন দেশে যে গণজাগরণ উঠেছে তার ভিত্তিতে চলছে দুর্বার একদফা আন্দোলন। সরকার পালানোর পথ খুঁজছে। শয়নে জাগরণে তারেক রহমানের ভয়ে অস্থির হয়ে প্রহর গুনছে সরকার।’
রিজভী আরও বলেন, ‘জনগণের অবরোধ চলাকালে ফেনীর লালপুলে মহাসড়কে চিনিভর্তি ট্রাকে আগুন দিতে গিয়ে গ্রেপ্তারকৃত সদর উপজেলাধীন ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি নুর উদ্দিন টিপুর গ্রেপ্তারে প্রমাণিত হয়।
অতীতের মতো আওয়ামী লীগ আগুনসন্ত্রাস নাশকতা করে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। নিজেরাই ধ্বংসযজ্ঞ, হত্যা-ভাঙচুর, সহিংসতা করে পুরোনো কায়দায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করছে।’
রিজভী বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্রকে কব্জায় নিয়ে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের মাধ্যমে সরকার টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। আইন-আদালত, প্রশাসন, পুলিশ সবকিছুই হুকুমের দাসে পরিণত হয়েছে।
বিএনপির সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ইন্তেকাল করেছেন প্রায় সাড়ে ৩ বছর আগে। ১ বছর আগে মারা গেছেন রামপুরা থানার ২৩নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির রহমান।
অথচ ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে মৌচাকে পুলিশের ওপর ককটেল ছুড়ে নাশকতা মামলার আসামি হয়েছেন সানাউল্লাহ মিয়া। দেশের অধিকাংশ মানুষ তাকে চিনেন। মিথ্যা মামলা করতে করতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে মামলাবাজ পুলিশ।
মামলার তাণ্ডব আর গ্রেপ্তার বাণিজ্যে অন্ধ হয়ে গেছে প্রশাসন। আমরা অবিলম্বে এই মিথ্যা মামলা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্বারা নিখোঁজ থাকা ছাত্রদল নেতাদের জনসম্মুখে হাজির করা এবং আহতদের সুস্থতা কামনা ও গ্রেপ্তারকৃত সব নেতৃবৃন্দের মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেপ্তার ৪৮০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ১৬টি, মোট আসামি ১৭০০ জনের অধিক নেতাকর্মী ও মোট আহত ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী।’
তিনি আরও বলেন, ‘২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মহাসমাবেশের ৪-৫ দিন পূর্ব থেকে অদ্যাবধি মোট গ্রেপ্তার ১১,২৫০ জনের অধিক নেতাকর্মী, মোট মামলা ২৪৯টির অধিক, মোট আহত ৩৯৯৬ জনের অধিক নেতাকর্মী ও মৃত্যু ১৩ জন (সাংবাদিক ১ জন)।
এ ছাড়াও মোট ১৭টি মিথ্যা মামলায় ৯ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও প্রায় ১১১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে।’