ট্রুডো সরকারের পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে: ভারত
Share on:
কানাডায় ক্রমেই বাড়ছে শিখ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা রাষ্ট্র ‘খালিস্তান’ দাবিদারদের কার্যক্রম। শনিবার (৮ জুলাই) কানাডায় ‘ফ্রিডম র্যালি’র ডাক দিয়েছে খলিস্তানপন্থীরা। এ নিয়ে তারা কিছু পোস্টার প্রকাশ করেছে, যেখানে টরন্টো ও ভ্যাঙ্কুভারে নিযুক্ত ভারতীয় দূতাবাসের কূটনীতিকদের ছবি দিয়ে নিশানা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত কানাডার হাই কমিশনারকে তলব করে ভারতের উদ্বেগের কথা জানিয়েছিল সাউথ ব্লক (ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়,বিদেশ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের কার্যালয় বিষয়ক সচিবালয়)। এরপরই কানাডা সরকারকে উদ্দেশ্য করে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খালিস্তানপন্থীদের বিষয়টি কানাডা সরকার কীভাবে সামলাচ্ছে তা দেখতে হবে। বহু দিন ধরেই দেশটিতে এ সমস্যা চলছে। দেখে মনে হচ্ছে, তারা ভোট ও রাজনীতি নিয়েই বেশি ভাবছে। তাদের পদক্ষেপ দুই দেশের সম্পর্কের উপরেও প্রভাব ফেলবে।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে সহিংসতাকে বৈধতা দেওয়া যাবে না বলে মন্তব্য করেছে ভারত। নয়া দিল্লি কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি শক্তভাবে তুলে ধরেছে। ভারতীয় কূটনীতিকদের বিরুদ্ধে ও কূটনৈতিক প্রাঙ্গণে সহিংসতা উসকে দেওয়ার পোস্টার একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। আমরা শক্ত ভাষায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছি।
ভারতের এমন প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ট্রুডো বলেছেন, শিখ বিক্ষোভকারীদের ব্যাপারে কানাডা মোটেই নমনীয় নয়। ভারতীয় কর্মকর্তারা ভুল ভাবছেন। সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসের হুমকি নিয়ে কানাডা সরকার সব সময়ই কঠোর মনোভাব দেখিয়েছে। কঠিন পদক্ষেপও নিয়েছে। ভবিষ্যতেও আমাদের ভূমিকা একই রকম থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কানাডায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। তবে আমরা সহিংসতা ও সব ধরনের উগ্রবাদ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিই। ট্রুডোর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় অরিন্দম বাগচী বলছেন, এটা মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইস্যু নয়। বরং সহিংসতায় প্ররোচনা, বিচ্ছিন্নতাবাদের বিস্তার ও সন্ত্রাসের বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপব্যবহারের ইস্যু।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জলি। নিজের টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ৮ জুলাইয়ের কর্মসূচির যে সব পোস্টার অনলাইনে প্রচার করা হচ্ছে, তাতে ভারতীয় কূটনীতিকদের ছবি রয়েছে। এটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা ওই কূটনীতিকদের সঙ্গেযোগাযোগ রাখছি।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি ভারতীয় দূতাবাসে যেকোনো হামলার ব্যাপারে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেকোনো মূল্যে ভারতীয় মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। খালিস্তানের জন্য ডাকা শনিবারের সমাবেশের প্রচারে টুইটারে দেওয়া একটি পোস্টারের আক্রমণাত্মক ভাষা নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনের পর এই মন্তব্য করেন ক্লেভারলি।
ভারতীয় শিখদের অনেকগুলো গোষ্ঠী কয়েক দশক ধরেই শিখদের জন্য ‘খালিস্তান’ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে আসছে। বিষয়টিকে নয়া দিল্লি বিচ্ছিন্নতবাদী অপতৎপরতা হিসেবেই দেখছে।
গত ১৯ জুন কানাডার সারে-তে একটি গুরুদোয়ারার পার্কিং লটে কেউ বা কারা খালিস্তানি নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে গুলি করে হত্যা করে। হরদীপ সিং নিজ্জর ভারত সরকারের কাছে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গী হিসেবে চিহ্নিত ছিলেন। তিনি ‘খালিস্তান টাইগার ফোর্স’ বা কানাডাতে ‘শিখস ফর জাস্টিসে’র (এসএফজে) মতো একাধিক সংগঠনের প্রধান ছিলেন।
৪৬ বছর বয়সী নিজ্জর আদতে পাঞ্জাবের জলন্ধরের বাসিন্দা হলেও বহু বহু বছর তিনি ভারতে যাননি। ভারত সরকার কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষর কাছে এর আগে অভিযোগ জানিয়েছিল, বব্বর খালসা ইন্টারন্যাশনাল (বিকেআই) নামে খালিস্তান-সমর্থক যে জঙ্গী গোষ্ঠীটি কানাডাতে দীর্ঘকাল ধরে সক্রিয়, তাদের হয়েও প্রচুর অর্থ সংগ্রহ করতেন হরদীপ সিং নিজ্জর।
নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনীর হাত থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিদেশের একাধিক খালিস্তানপন্থী সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে চর্চা হচ্ছে, তা নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি ভারত সরকার। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি
এমআই