tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২১:২৯ পিএম

বিমানবন্দরে মাহমুদুর রহমানকে ছাত্র-জনতার গণ সংবর্ধনা


news_1727411523880

দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাসে নির্বাসনে থাকার পর অবশেষে দেশে ফিরেছেন কারা নির্যাতিত সাংবাদিক ও দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।


শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ল ৯ টায় তুরস্ক থেকে একটি বিমানে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান তিনি। এসময় তাকে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে), সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। বিমানবন্দরে তাকে শুভেচ্ছা জানান দৈনিক আমার দেশ এর সহকর্মীরা।

বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ও সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আবদুল্লাহ, বিএফইউজের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বাছির জামাল, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো: শহিদুল ইসলাম, সেক্রেটারি খুরশিদ আলম, সাবেক সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার, আমার দেশ পত্রিকার বার্তা সম্পাদক জাহেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের সাংবাদিক নেতা ও শুভাকাঙ্খীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমসহ দলটির অন্য নেতারা মাহমুদুর রহমানকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন।

বিমানবন্দর চত্ত্বরে তাৎক্ষনিক সংবর্ধনাকালে দেয়া বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাসে নির্বাসিত থাকার পর আপন মাতৃভূমিতে আসতে পেরে মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। সেই সঙ্গে ছাত্রজনতার মহান বিপ্লবে যারা শহীদ হয়েছেন, শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছেন তাদের আত্মর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি। সেই শহীদদের অবদান আমরা কখনো ভুলবো না। তিনি বলেন, শহীদ আবু সাঈদ নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে ফ্যাসিবাদকে কবর দিয়েছে। একসময় বাংলাদেশের তরুণ কিউবার বিপ্লবের নায়ক চে-গুয়েভারাকে বিপ্লবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করত, সেই বাংলাদেশের তরুণ এখন শহীদ আবু সাঈদকে তাদের আদর্শ হিসেবে জানে। বাংলাদেশে বিপ্লবের আকইনের নাম শহীদ আবু সাঈদ। তার দুই হাত প্রসারিত করে ফ্যাসিবাদের পুলিশের উদ্ধত রাইফেলের সামনে উদ্ভাসিত মুখে দাঁড়িয়ে থেকে শাহাদাত বরণ করা, বাংলাদেশের জনগণকে যুগের পর যুগ অনুপ্রেরণা দেবে।

মাহমুদুর রহমান বলেন, আজ থেকে দুইশ বছর আগে তিতুমীর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের সাথে লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন ১৮৩১ সালে, আজকে দুইশ বছর পর শহীদ তিতুমীরকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি। আশাকরি আগামী দুইশ বছর পরে তখনকার বাংলাদেশের প্রজন্ম আবু সাঈদের কথা বলে তিতুমীরের মত গর্ব অনুভব করবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী আবু সাঈদ আমাদের কাছে বিপ্লবের আইকন হিসেবে থাকবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মানবতাবোধের মহানায়কের নাম বলতে গেলে আমাদের মুগ্ধের নাম মনে পড়ে। উত্তররার রাজপথে সুদর্শন এই তরুণ পরম মমতায় রাস্তায় দৌঁড়ে বেড়িয়েছে আর বলেছে-‘পানি লাগবে ভাই’। এই দৃশ্য মনে করলে আমি আবেগ ধরে রাখতে পারি না। আল্লাহর যেন মুগ্ধর উত্তম পুরস্কার দান করেন, সেই প্রার্থনা করি। কেয়ামতের দিন সবাই যখন তৃষ্ণার্থ থাকবে, ইনশাআল্লাহ মুগ্ধ তখন তৃষ্ণার্থ থাকবে না। সাত বছরের শিশু তার মাগে নিয়ে রাজপথে নেমে আসার স্মৃতি ভুলতে পারব না।

তিনি বলেন, ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। তার পতনের কারণে আমরা আমাদের স্বার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি। আমি বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছি। আমার মায়ের গুরুতর অসুস্থতার কথা শুনে একদিনের নোটিসে দেশে আসতে হয়েছে জানিয়ে আমার দেশ সম্পাদক বলেন, আমার মা দীর্ঘ ছয় বছর একাকী জীবনযাপন করতে বাধ্য হয়েছেন। এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তিনি হাসপাতালে আছেন। তারপর আমার মাথার ওপর বিগত সরকারের শতাধিক মামলা রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১০৭ টি মামলার হিসাব পাঠিয়েছেন আইনজীবী। আরও মামলা থাকতে পারে। তিনি বলেন, একটি উদ্ভট মামলায় আমাকে ৭ বছর সাজাও শুনিয়েছে ওই সরকার। সেই মামলায় বর্ষিয়ান সাংবাদিক ও সম্পাদক শফিক রেহমানের সঙ্গে আমাকে জড়িয়ে। শফিক রেহমানও জানেন-ওই মামলার সাথে আমার বিন্দুমাত্র সংশ্লিষ্টতা নাই। তারপরও শেখ হাসিনা তার বিদ্বেশ চরিতার্থ করতে আওয়ামী আদালতকে দিয়ে আমাকে ৭ বছরের জেল দিয়েছে। এর বাইরেও আমার নামে গোটা পাচেক অ্যারেস্ট ওয়ান্টেও অপেক্ষা করছে বলে শুনেছি। আমার মায়ের অসুস্থ্যতা, আমার সাজা ও অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট-পরিস্থিতি বিবেচনা করে আজকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া সমীচীন মনে করছি না। আগামী দুই দিন হাসপাতালে মায়ের সাথে থাকতে চাই। রোববার নিম্ন আদালতে গিয়ে হাসিনার সাজা এবং অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট মোকাবেলা করব। মাহমুদুর রহমান বলেন, আদালত থেকে আমাকে কারাগারে যেতে হতে পারে। সেইরকম আশঙ্কায় আমি বিন্দুমাত্রা বিচলিত নই। শেখ হাসিনার আমলে আমি পাঁচ বছর কারাগারে ছিলাম। এই আমলে পাঁচ মাস কারাগারে থাকতে আমার কোন সমস্যা নাই। আমার বয়স হলেও জেলে থাকার মত মানসিক ও শারীরিক শক্তি এখনো আছে। কাজেই এটা নিয়ে কেউ বিচলিত-উদ্বিগ্ন হবেন না। আইনকে তার রাস্তায় যেতে দিন। আমাকে আমার মত করে লড়াই করতে দিন।

মাহমুদুর রহমান বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আমি আমার মত করে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে গেছি। রাজনৈতিক দল বিএনপি-জামায়াত বা অন্যান্য দল তাদের মত লড়াই করেছে। আর আমি আমার মত করে আমার পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছি। আমার লড়াই ছিল বুদ্ধিভিত্তিক লড়াই, আমার লড়াই ছিল কালচারাল লড়াই। আজকে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে আমি আশাবাদী জেল থেকে বেরিয়ে আরও বড় পরিসরে আপনাদের সঙ্গে দেখা হবে। সেদিন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভারতীয় আগ্রাসন এবং বাঙালী মুসলমানের সাংস্কৃতিক লড়াই নিয়ে বিশদ আলোচনা করব। আমার মত নগন্য ব্যক্তিকে স্বাগত-শুভেচ্ছা জানাতে কষ্ট করে এখানে আসার জন্য আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অসুস্থ মায়ের জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।

সবাইকে সতর্ক করে মাহমুদুর রহমান বলেন, পরাজিত ফ্যাসিবাদ বিদেশে বসে তার বিদেশি প্রভূ এবং বাংলাদেশের এজেন্টদের দিয়ে বিপ্লবকে নস্যাত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। একজন সিনিয়র সিটিজেন এবং আপনাদের লড়াইয়ের সাথী হিসেবে সনির্বন্ধ অনুরোধ-আপনাদের মধ্যে যেন কোন অনৈক্য না আসে। ঐক্যে যেন কোনরকম ফাটল না ধরে এবং ফ্যাসিবাদ যাতে বাংলাদেশে আবার মাথাচাড়া দিয়ে না উঠতে পারে। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, কবর হয়েছে কিন্তু সেটা যেন চিরদিনের জন্য হয়ে যায়-এই কারণে যারা লড়াই করেছেন, ছোটখাট কারণে যেন তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি না হয় সেই আহবান জানান তিনি। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সারা দেশে ১২৪টি মামলা করা হয়েছিল। ২০১০ সালের জুনে প্রথমে দফায় দৈনিক আমার দেশ বন্ধ ও সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে আটক করা হয়। ২০১৩ সালের ১১ এপ্রিল আবারও দ্বিতীয় দফায় আমার দেশ বন্ধ করে মাহমুদুর রহমানকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। এরপর দিনের পর দিন রিমান্ডে নিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। পরবর্তীতে সাজানো এক মামলায় মাহমুদুর রহমান ও তার স্ক্রীকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

প্রেসবিজ্ঞপ্তি