পুলিশ গণতান্ত্রিক অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করছে : রিজভী
Share on:
বিএনপি’র সকল দিক বিবেচনা করে ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের সিদ্ধান্ত দিলেও পুলিশ শর্তসাপেক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার জোর জবরদস্তি করছে। এটি একটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকারের বিরুদ্ধে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
শুক্রবার রাজধানীর নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, নয়াপল্টনে বিএনপি’র গণসমাবেশ নিয়ে সরকার বিচার-বিবেচনাবোধহীন চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন যেখানে মনে করে সেখানে অনুষ্ঠান করার অনুমতি পায়। অথচ বিএনপি’র কর্মসূচি পালন করতে গেলে অসংখ্য শর্তের বৃত্তে তা আটকানোর চেষ্টা করা হয়।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়াশী লীগের সমাবেশে শত শত বাসে মানুষ আনা হয়। ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মিছিল যায় সেখানে। সারা ঢাকা জুড়েই মাইকের হর্ণ বসানো হয়। নগরবাসীর চলাচল স্থবির হয়ে যায়। অথচ পুলিশ টু শব্দ করে না। বরং তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করে যায়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এমন একটি রাজনৈতিক দল যাদের একমাত্র সাধনা অবৈধ ক্ষমতা ধরে রাখা। ক্ষমতা লাভের আগে বা পরে কোনো সময় তারা ন্যায়নীতি গ্রাহ্য করে না। এ কারণেই গণতন্ত্রের নাম শুনলেই তারা চমকে ওঠে। যেন তেন প্রকারে ক্ষমতায় এসেই আটঘাট বেঁধে গণতন্ত্র, গণঅধিকার, নাগরিক স্বাধীনতা ইত্যাদি বিষয়গুলি নিশ্চিহ্ন করতে উঠে পড়ে লাগে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ১০ ডিসেম্বরের ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে ঘিরে পুলিশ বিভিন্নভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। বিএনপি’র জনসমাবেশে জনতার বিপুল সংখ্যক সমাগম দেখে আওয়ামী সরকার তেলেসমাতি শুরু করেছে। ঢাকা বিভাগসহ সারা দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী চিরুনি অভিযান চালাচ্ছে। সরকার পরিকল্পিত নাশকতার ঘটনা সৃষ্টি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা ও গণগ্রেফতার করতে কাণ্ডজ্ঞানহীন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ নেতারা এখন হুমকি দিচ্ছেন যে ১০ ডিসেম্বর বিএনপি সমাবেশের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করলে হেফাজতের পরিণতি ভোগ করতে হবে। এ কথা শুনে এখন মানুষ আবারো বিস্ময়ে প্রশ্ন করছে যে আপনারা ওই দিন হেফাজতকে দমন করতে কত লোককে হত্যা করেছেন ?
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত সন্ত্রাসের যত আলামত দেখা যাচ্ছে তা আওয়ামী লীগ ও তাদের পৃষ্ঠপোষরা করছে। যেটি গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। আবারো বিএনপিকে দমণের নামে সেই হিংসার পথে নেমেছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, আন্দোলন দমানোর নামে আরো কত যে মৃত্যু, ধ্বংস, বাস্তুচ্যুতি এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটাবে তা নিয়ে জনমনে বিরাট সংশয় দেখা দিয়েছে।
রিজভী বলেন, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান দলীয়করণ ও মহাদুর্নীতিতে শূন্য গহব্বরে পরিণত হয়েছে। কোনো নিয়ম-নীতির বালাই নেই। ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে সরকারের ঘনিষ্ঠ লোকজনরা লুটে নিয়ে গেছে। বাংলাদেশে আজ লুটেরাদেরই জয়জয়কার। রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটেরাদের বিচার না হওয়ার কারণে দেশ আজ গভীর খাদের কিনারে।
প্রতি সেক্টরে দুর্নীতির সমান্তরাল উস্ফলন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারাজাতি অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপন্ন। সবাই জানে এই দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রটেক্টর আওয়ামী সরকার। তাই তারা নির্বিকার, নিশ্চুপ। দেশীয় সম্পদ লুটপাটই আওয়ামী লীগের জীবিকা উপার্জনের উপায়। আর এ কারণেই তারা বিরোধী কর্মসূচি ও বিরোধী কণ্ঠকে দমানোর জন্য হিংসাযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে’।
তিনি বলেন, জনগণ এখন জেগে উঠেছে। অখণ্ড শান্তি বিরাজ করতে হলে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দূর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিএনপি ঘোষিত ধারাবাহিক কর্মসূচি চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে একযোগে মাঠে নামা এখন জনগণের দায়িত্ব। আগামী ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে মানুষের প্রবল স্রোত তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ সময় তিনি গতকাল এবং আজ পুলিশি গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলার সংবাদ তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম আজাদ, মীর শরাফত আলী সপু, ব্যরিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, মাসুদ আহমেদ তালুকদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এমআই