মশাবাহিত ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ ধরন
Share on:
ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান কারণ এডিস ইজিপ্টি মশা (ডেন-ভি)। প্রধানত এডিস ইজিপ্টি প্রজাতির স্ত্রী মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রামিত হয়।
এডিস ইজিপ্টি মশা ডেঙ্গুর পাশাপাশি চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার এবং জিকা ভাইরাসেরও বাহক। এ ছাড়াও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমেও ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমিত হয়।
ডেঙ্গু ভাইরাস হচ্ছে ফ্ল্যাভিভাইরাস গণের অন্তর্ভুক্ত একটি এক সূত্রক আরএনএ ভাইরাস। এ প্রোটিন-ই বা এনভেলপ প্রোটিনের সাহায্যে ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির দেহকোষে আটকে থাকার সুযোগ পায়।
ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ টি ভাগ বা সেরোটাইপ রয়েছে। এগুলো হলো: ডেন ১, ডেন ২, ডেন ৩ এবং ডেন ৪।
২০১৩ সালে একটি গবেষণায় ডেঙ্গু ভাইরাসের আরো একটি সেরোটাইপ ‘ডেন-৫’ শনাক্ত করা হয়। তবে পরবর্তীতে সেটি নিয়ে আর কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।
ডেঙ্গু ভাইরাসের প্রত্যেকটি সেরোটাইপ ডেঙ্গু জ্বর সৃষ্টি করতে পারে। যদি কেউ ৪ টি সেরোটাইপের মধ্যে কোনো একটি সোরোটাইপে সংক্রমিত হয়, তখন সেটির বিরুদ্ধে শরীরে অধিক প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। কিন্তু বাকি সেরোটাইপগুলোর ক্ষেত্রে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বপ্লমেয়াদি হয়ে থাকে।
ন্যাচার ডটকমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রথম ডেঙ্গু সংক্রমণের পর ২ থেকে ৩ মাস বাকি ৩ টি সেরোটাইপের সংক্রমণ থেকে ব্যক্তিরা সুরক্ষিত থাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে, এটি দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা নয়। এই অল্প সময়ের পরে, একজন ব্যক্তি বাকি ৩ টি ডেঙ্গুর সেরোটাইপের যে কোনো একটিতে আক্রান্ত হতে পারেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, পরবর্তী সংক্রমণ ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। অর্থাৎ যাদের একবার ডেঙ্গু হয়ে গেছে, তাদের পুনরায় এ ভাইরাস আক্রমণ করলে, তা ভয়ঙ্কর হয়ে দেখা দেয়।
এ বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিদিনই আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যা বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ১৬৪২৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৫০৬ জন।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি অ্যান্ড মেডিসিন রেফারেল সেন্টারের তথ্য জানান, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের ৭৫ শতাংশই ভাইরাসটির ডেন ২ দ্বারা আক্রান্ত।
প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন ১০০-১৫০টি নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। এর মধ্যে ২০০ নমুনা পরীক্ষা করে ১৫১ টিতে ডেন-২ পাওয়া গেছে। শতকরা হিসাবে যা ৭৫.৫ শতাংশ। এছাড়া ডেন-৩ মিলেছে ১৮ শতাংশ এবং ৬ শতাংশ নমুনায় শনাক্ত হয়েছে ডেন ২ ও ৩।
ডেঙ্গু জ্বর মুলত ২ ধরনের। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর ও হোমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর।
ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয় সেগুলো হচ্ছে, তীব্র জ্বর, বমি, পেট ব্যথা ও মাথা ব্যথা, কোমর ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, ত্বকে র্যাশ ওঠা ইত্যাদি।
হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ হলো, হোমোরেজিক, রক্তক্ষরণ যা ডেঙ্গুজ্বর খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। ক্ল্যাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গগুলোই তীব্র হয়ে দেখা দেয় এবং সাথে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
বিশেষ করে মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত, ত্বকের নিচে রক্ত জমাটবাঁধা, রক্তবমি, পায়খানার সাথে কালো রক্ত যাওয়া ইত্যাদি দেখা দিয়ে থাকে। যার ফলে হাইপোডলিউমিক শকে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ অবস্থাকে বলা হয় ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।
স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা ডেঙ্গু ভাইরাসের ৪ টি সেরোটাইপের বিরুদ্ধে কার্যকর আদর্শ টিকা তৈরির চেষ্টায় আছেন। তাই এখনো কোনো প্রতিষেধক নেই, কোনো অ্যান্টিভাইরালও কার্যকর নয়, তাই প্রধান উপায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলা।
এ ক্ষেত্রে মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে মশার বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে। এডিস মশার বংশবিস্তারের উপযোগী বিভিন্ন স্থানে যেমন, কাপ, টব, টায়ার, ডাবের খোসা, গর্ত, ছাদ ইত্যাদিতে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে থাকে এমন পোশাক পরতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দিনের বেলাতেও মশারি ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন।
এন