পরাজিত স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোলিং এজেন্টকে কুপিয়ে হত্যা
Share on:
নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী) আসনে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট শাহেদুজ্জামান পলাশকে (৩৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শনিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত ১০টার দিকে সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব মির্জানগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোনাইমুড়ী থানার পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। তবে কে বা কারা খুন করেছেন, তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
নিহত শাহেদুজ্জামান পলাশ সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব মির্জানগর গ্রামের মো. জামাল উদ্দিনের ছেলে। শাহেদুজ্জামান পূর্ব মির্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে কাঁচি প্রতীকের পোলিং এজেন্ট ছিলেন বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শাহেদুজ্জামান বিদেশে থাকতেন। দেশে আসার পর এলাকায় মাছ ও মুরগির খামার করেন। স্ত্রী নিয়ে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। দিনের বেলায় নিজের বাড়িতে আসতেন এবং খামার দেখাশোনা করতেন। গতকাল রাত সাড়ে ৮টার দিকে শাহেদুজ্জামানের সঙ্গে তার স্ত্রীর মুঠোফোনে ভিডিও কলে সর্বশেষ কথা হয়েছিল। নিজের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি আসার পথে গতকাল রাত ১০টার দিকে পূর্ব মির্জানগর গ্রামের নিজ বাড়ির পাশের খালি জায়গায় রক্তাক্ত অবস্থায় শাহেদুজ্জামানের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন প্রতিবেশীরা। তার কপাল ও মুখে ধারালো অস্ত্রের আঘাত দেখা গেছে। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি সোনাইমুড়ী থানা পুলিশকে অবহিত করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে মরদেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায়।
কাঁচি প্রতীকের আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে জাল ভোট ও অবৈধ প্রভাব বিস্তারের প্রতিবাদ করায় ওই দিন থেকে স্থানীয় নৌকা প্রতীকের সমর্থকেরা শাহেদুজ্জামানকে নানা হুমকি দিয়ে আসছে। এর জেরে তাকে খুন করা হতে পারে। আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি।
তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করে নৌকা প্রতীকের বিজয়ী সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম বলেন, আমি গত ১০ বছর নোয়াখালী-২ আসনে সংসদ সদস্য ছিলাম। দীর্ঘ এই সময়ে এলাকায় কোনো ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী আমাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে অপপ্রচারে নেমেছেন। হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানার পর আমি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছি।
সোনাইমুড়ী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে আমরা খবর পেয়ে মরদেহ উদ্ধার করেছি। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। তদন্ত শেষে জানা যাবে কেন কী কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ৭ জানুয়ারি হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নোয়াখালী-২ (সেনবাগ-সোনাইমুড়ী) আসনে সংসদ সদস্য হয়েছেন মোরশেদ আলম। একই আসন থেকে টানা তৃতীয়বার নির্বাচনে জয় লাভ করেন তিনি। যদিও বজরা ও নাটেশ্বর ইউনিয়নের ফলাফল বাতিল করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক। তিনি নোয়াখালী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পুনরায় ভোটগ্রহণের জন্য লিখিত আবেদন জমা দেন।
প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা গেছে, ১১৮ কেন্দ্রের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোরশেদ আলম ভোট পেয়েছেন ৫৬ হাজার ১৮৬টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক (ট্রাক প্রতীক) পেয়েছেন ৫২ হাজার ৮৬৩ ভোট। এই হিসাবে মোরশেদ আলম ৩ হাজার ৩২৩ ভোটে আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিককে পরাজিত করেছেন। এ আসনে মোট বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৭০৩টি, বাতিল হওয়া ভোটের সংখ্যা তিন হাজার ৩২৬টি, সর্বমোট প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ২৯টি এবং প্রদত্ত ভোটের শতকরা হার হলো ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ।
এনএইচ