ভারতে লোকসভা ভোটের পরিসংখ্যান মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে
Share on:
ভারতের নির্বাচন বিস্ময়ের বিস্ময়। সারা পৃথিবী তাকিয়ে রয় বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশের দিকে। আজ শুরু হয়েছে ভোট। নির্বাচন হবে সাত দফায়।
প্রায় ১৪০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত বিশ্বের সবথেকে জনবহুল দেশ। এরকম একটা দেশের নির্বাচন সংক্রান্ত সংখ্যাগুলোর দিকে তাকালে মাথা ঘুরে যেতে পারে।
লোকসভার ৫৪৩ জন সদস্যকে নির্বাচন করতে ছয় সপ্তাহ ধরে সাত দফায় ভোট নেওয়া হবে।
নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হবে ৪ জুন। এই নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা ৯৬ কোটি ৯০ লক্ষ।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল আর ফ্রান্সের জনসংখ্যার প্রায় সমসংখ্যক মানুষ ভারতের নির্বাচনের ভোটার তালিকায় রয়েছেন।
ওই সব দেশগুলোর মিলিত জনসংখ্যা ভারতের ভোটারের সংখ্যার থেকে সামান্য কম, তাই ওই দেশগুলির সঙ্গে বেলজিয়ামের জনসংখ্যাও জুড়ে দেওয়া যেতে পারে।
ভারতের এবারের ভোটারদের মধ্যে ৪৯ কোটি ৭০ লাখ পুরুষ এবং ৪৭ কোটি ১০ লক্ষ নারী। প্রথমবার ভোট দেবেন, অর্থাৎ যাদের বয়স ১৮-১৯ বছর, এমন ভোটার ১ কোটি ৮০ লক্ষ।
প্রবীণ ভোটার, যাদের বয়স ৮৫ থেকে ৯৯ বছর, এরকম ৮২ লাখ মানুষের নাম আছে ভোটার তালিকায়। নিরাপত্তা আর ভোটের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণেই নানা দফায় ভোট করানো হচ্ছে।
বয়স্ক আর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা আছে যাদের, তাদের বাড়িতে গিয়েও ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে নির্বাচন কমিশন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমারের ভাষ্য, ভারতের প্রতিটি কোনায় গণতন্ত্রকে পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য সারা দেশে ১৫ লাখ ভোট কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে।
কুমার বলছেন, একজন ভোটার জঙ্গলে বাস করুন অথবা তুষারাবৃত পাহাড়ে, আমাদের কর্মীরা বাড়তি পরিশ্রম করে হলেও প্রত্যেক ভোটারের কাছে পৌঁছবেন। আমরা ঘোড়া আর হাতি বা খচ্চরের পিঠে চেপেও যেমন যাব, তেমনই হেলিকপ্টারেও যাব। আমরা সব জায়গায় পৌঁছব।
বেশিরভাগ ভোটগ্রহণ কেন্দ্রই স্কুল, কলেজ বা কমিনিউটি সেন্টারে হলেও বেশ কিছু অদ্ভুত জায়গাও বাছা হয়েছে বুথ তৈরি করার জন্য – যার মধ্যে রয়েছে জাহাজের কন্টেইনার, পাহাড়ের চূড়া বা জঙ্গলের মধ্যেও বুথ হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশন যখন বলে যে, প্রত্যেক ভোটারই গুরুত্বপূর্ণ সেটা শুধু কথার কথা নয়। বিগত লোকসভা নির্বাচনে, ২০১৯ সালে পাঁচ জন ভোট কর্মী বাসে চেপে আর তার পরে পায়ে হেঁটে দুদিন ধরে পৌঁছিয়েছিলেন এমন একটি বুথে, যেখানে মাত্র একজন ভোটার ছিলেন। উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের ওই ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের একাকী ভোটার ছিলেন একজন ৩৯ বছর বয়সি নারী।
রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য হল উত্তরপ্রদেশ। সে রাজ্যে ভোটার রয়েছেন প্রায় ২৪ কোটি। এটিই ভারতের সবথেকে জনবহুল রাজ্য আর এখান থেকেই সংসদে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সদস্য নির্বাচিত হন।
বিশ্লেষকরা বলেন, দিল্লি যাওয়ার পথটা উত্তর প্রদেশ হয়েই যায়। এই রাজ্যে যে দল ভাল ফল করে, সাধারণত: ভারত শাসন করে থাকে তারাই। এই রাজ্য থেকে ভারতের আটজন প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালে যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, সেবছর বিজেপি উত্তরপ্রদেশের ৮০টির মধ্যে ৭১ টি আসনে জিতেছিল। পরের বার, ২০১৯ সালে অবশ্য বিজেপির জেতা আসনের সংখ্যাটা কমে ৬২ হয়েছিল। মি. মোদী ২০১৯ সালে প্রাচীন শহর বারাণসী আসন থেকে জিতেছিলেন, এবারও তিনি ওই আসন থেকেই ভোটে লড়ছেন।
উত্তর প্রদেশ থেকে যেমন সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন, অন্যদিকে রয়েছে সিকিম, নাগাল্যাণ্ড, মিজোরাম আর আন্দামান, লাক্ষাদ্বীপ এবং লাদাখের মতো কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলি, যার প্রতিটি থেকে মাত্র একজন করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
অন্য যেসব রাজ্য এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, তার মধ্যে আছে ৪২ টি আসনের পশ্চিমবঙ্গ, ৪৮টি আসনের মহারাষ্ট্র, ৪০ আসনের বিহার এবং ৩৯টি আসনের তামিলনাডু।
দেশের ২২টি রাজ্য আর কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে একদিনেই ভোট নেওয়া হয়ে যাবে, তবে উত্তর প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ আর বিহারের মতো বড় রাজ্যগুলিতে সাত দফায় ভোটগ্রহণ হবে।
বিজেপি, কংগ্রেস,আম আদমি পার্টি আর সিপিআইএম সহ ছয়টি জাতীয় স্তরের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ছাড়াও আরও কয়েক হাজার প্রার্থী এই নির্বাচনে লড়তে চলেছেন। জাতীয় দলগুলি ছাড়াও ৫৮ টি আঞ্চলিক ভাবে স্বীকৃত দল এবং আরও অনেক ছোট ছোট রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও ভোটের ময়দানে নেমেছেন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।
এনএইচ