বিগত ৫ বছরে সয়াবিনের ঊর্ধ্বমুখী বাজার দর
Share on:
দেশের তেলের বাজারে অস্থিরতা কাটেনি এখনো। ক্রেতাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) বলছে, গত পাঁচ বছরে কাগজে-কলমে লিটারপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ৬৩ টাকা ৮০ পয়সা। ২০২১ সালে দাম বেড়েছে প্রায় প্রতি মাসে। বছরে যা ছিল ৫৮ টাকা ১১ পয়সা।
২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেওয়া ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়। দেশের মূল্যস্ফীতিতেও সয়াবিন তেলের প্রভাব রয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠানটি।
বিবিএসের হালনাগাদ তথ্যে দেখা যায়, মাছ, মাংস, ব্রয়লার মুরগি, শাক-সবজি, ফল, মসলা, দুধজাতীয় ও অন্যান্য খাদ্য, চাল, মসুর (চিকন) ও অ্যাংকর ডাল, দেশি পেঁয়াজ, ছোলা, রসুন, খোলা আটা ও প্যাকেট ময়দা, লবণ, সয়াবিন তেল এবং ফার্মের মুরগির ডিমসহ ৭৪৭টি পণ্যের দাম নিয়ে নিয়মিত মূল্যস্ফীতি প্রকাশ করে বিবিএস। মূলত ৪০০টি আইটেম থেকে প্রতি মাসে মূল্যস্ফীতির হার বের করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, প্রতি মাসে ৪০০টি নিত্যপ্রয়োজনীয় আইটেম থেকে মূল্যস্ফীতি বের করা হয়। এর মধ্যে সয়াবিন তেলও রয়েছে। কী পরিমাণে ব্যবহার হয় সে হিসাবও আছে। আমাদের ৬৪ জেলায় দুটি করে বাজার। এছাড়া ঢাকায় ১২টি আউটলেট আছে। ৬৪টি জেলা ও ঢাকার ১২টি আউটলেট থেকে এ হিসাব করা হয়।
বিবিএস সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৯৬ টাকা ৩০ পয়সা। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬ টাকা ৬৯ পয়সা। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৯৮ টাকা ১৫ পয়সায়। ২০২১ সালের দামে আসে বড় লাফ। এক লাফে বেড়ে দাঁড়ায় ১২১ টাকা ৭০ পয়সা। বছরজুড়ে দাম বাড়া অব্যাহত থাকে। শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বর মাসে গিয়ে দাম বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৬ টাকা ২৬ পয়সায়। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ টাকা ১০ পয়সা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে মোট পাঁচ লাখ ৮৫ হাজার ৮৫৭ মেট্রিক টন তেলবীজ উৎপাদন হয়েছিল। ২০১৯-২০ সালে উৎপাদন হয় পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। অর্থাৎ গত বছর উৎপাদন বেড়েছে সাড়ে ২৮ হাজার টন বা ৫ শতাংশ। আগের বছর উৎপাদন বেড়েছিল ৩৮ হাজার টন বা ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তেলবীজ উৎপাদন হয়েছিল পাঁচ লাখ ১৮ হাজার টন।
দেশে তেলের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম যে হারে বাড়ে তারচেয়ে বেশি হারে দেশে বাড়ানো হয় বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের।
উল্লেখ্য, দেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সয়াবিন তেল আমদানি করে। এসব প্রতিষ্ঠান অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানি করে পরিশোধনের পর বাজারজাত করে। সয়াবীজ আমদানি করে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে তেল বাজারজাত করে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। দুইভাবে দেশের বার্ষিক ১২-১৩ লাখ টন সয়াবিন তেলের চাহিদা পূরণ করা হয়। সেই হিসাবে প্রতি মাসে সয়াবিনের চাহিদা রয়েছে এক লাখ টনের কাছাকাছি। তবে রোজায় এই চাহিদা কিছুটা বেড়ে যায়।
এমআই