অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ দুই বছর চান ৫৩ শতাংশ ভোটার
Share on:
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এই সরকারের মেয়াদ কত দিন হতে পারে সেটা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে একটি জরিপে উঠে এসেছে সাধারণ ভোটারদের ভাবনা। সেই জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৫৩ শতাংশ ভোটার এই সরকারের মেয়াদ দুই বছর বা তার চেয়ে কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন। আর ৪৭ শতাংশ ভোটার চান মেয়াদ তিন বছর বা এর চেয়ে বেশি হোক।
নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব পলিসি অ্যান্ড গভার্নেন্সের (এসআইপিজি) গবেষণায় উঠে এসেছে এই তথ্য। বুধবার (২ অক্টোবর) জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় জরিপের প্রতিবেদন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সচিব ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যদের মধ্যে আলোচক হিসেবে ছিলেন এসআইপিজির উপদেষ্টা অধ্যাপক সালাহউদ্দিন এম. আমিনুজ্জামান ও এনএসইউর রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের (পিএসএস) অধ্যাপক নাভিন মুর্শিদ।
জরিপের তথ্য ও ফলাফল উপস্থাপন করেন এনএসইউর এসআইপিজি ও পিএসএসের সহকারী অধ্যাপক ড. আকরাম হোসেন। এছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এসআইপিজির সিএমএসের সদস্য ও এনএসইউর চেয়ারম্যান এবং ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান।
গবেষণায় আটটি বিভাগের ১৭ জেলার এক হাজার ৮৬৯ জনের ওপর এই জরিপ করা হয়। জরিপে অংশ নেওয়া ৯৬ শতাংশ মনে করেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিত হওয়া উচিত। ৪৬ শতাংশ বিশ্বাস করেন সাংবিধানিক পরিবর্তন প্রয়োজন। ১৬ শতাংশ চান নতুন সংবিধান।
উত্তরদাতাদের ৬৩ শতাংশ মধ্যবয়সী (২৮-৫০ বছর), ২২ শতাংশ জেনারেশন-জেড (১৮-২৭ বছর) এবং ১৪ শতাংশের বয়স ৫০ বছরের উপরে। এছাড়া জরিপের উত্তরদাতাদের ৫৪ শতাংশ শহরাঞ্চল ও ৪৬ শতাংশ গ্রামীণ অঞ্চলের বাসিন্দা। উত্তরদাতাদের ৪৬ শতাংশ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অনিশ্চিত। যেখানে ৫৪ শতাংশ মূলধারার রাজনীতিতে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আমি মনে করি এই গবেষণাটা সঠিকভাবেই করা হয়েছে এবং এই জরিপে যে বিষয়টি উঠে এসেছে এটা বোধহয় আমাদের সবারই জানা। আমরা নিজেরা যে বিষয়টি উপলব্ধি করি, অন্যের কাছ থেকে শুনি এই গবেষণায় যেটা এসেছে সেটা তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
বদিউল আলম বলেন, ‘একটা জিনিস, যেটা আমার মনে হয় সুস্পষ্টভাবে মানুষের উপলব্ধিতে ছিল, এমনকি মানুষের বক্তব্যতেও ছিল, সেটা হচ্ছে বিচার। যারা এত বছর ক্ষমতায় থেকে অন্যায় করেছে, যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে, যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, আর্থিক অপরাধ করেছে এবং যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছে, তাদের বিচারের কথাটা আমার মনে হয় সবার মনেই ছিল। সবাই চেয়েছে এটা যেন হয়। এ যে জনআকাঙ্ক্ষা। জনগণ চাচ্ছে যে এদের বিচার হোক। আমরা চাই তাদের স্বচ্ছ ন্যায়বিচার হোক। ন্যায়বিচারের মাধ্যমে তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করে বিচার করা হোক। একই সঙ্গে রাষ্ট্র মেরামত হোক যাতে এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
সুজন সম্পাদক বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন আগেও হয়েছে, কিন্তু আমরা তার সুফল পাইনি। এর কারণ হলো পলিটিক্যাল কালচার। আমাদের রাজনীতিবিদরা যে অঙ্গীকার করেন, জনগণ যেটা চায় সে ব্যাপারে ক্ষমতায় যাওয়ার পরে যদি আন্তরিকতার সঙ্গে তারা সেটা বাস্তবায়ন না করেন তাহলে তার সুফল কখনোই পাওয়া যাবে না। সুফল যদি পেতে হয় তাহলে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে, আমাদের রাজনৈতিক দলের পরিবর্তন করতে হবে। আমরা যদি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই তাহলে আমাদের মন মানসিকতা গণতান্ত্রিক হতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতান্ত্রিক হতে হবে।’
এমএইচ