tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৩ অগাস্ট ২০২৪, ১১:০৮ এএম

প্রাণ বাঁচাতে খালি হাতে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটছেন বন্যার্ত মানুষ


2_20240823_095022728

ভয়াবহ বন্যার কবলে ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জসহ দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১২ জেলার মানুষ। আকস্মিক এই বন্যায় ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট তলিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। অনেকেই ঘর থেকে কিছু বের করতে না পেরে খালি হাতে ছুটে এসেছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। দুর্গত এলাকায় এখন দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট।


গত সোমবার থেকে কুমিল্লার গোমতী নদীর পানি বাড়তে থাকে। মাত্র একদিনেই নদীর পানি উপচে তলিয়ে যেতে শুরু করে নিচু এলাকা।

আকস্মিক বন্যায় বেশি বিপাকে পড়েছেন গোমতী নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। সহায়-সম্বল ঘরে রেখেই জীবন বাঁচাতে ছুটে যান আশ্রয়কেন্দ্রে।

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন বলেন, এই বছরে হঠাৎ এই অবস্থা হয়েছে। যে ক্ষতি হয়েছে তা বলার বাহিরে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। একটা গরু মারা গেছে।

নোয়াখালীর ৯ উপজেলায় পানিবন্দি ২০ লাখ মানুষের জন্য আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪০০। তবে বেশিরভাগ কেন্দ্রেই দেখা দিয়েছে খাবার সংকট।

আশ্রয়কেন্দ্রে আসা এক বয়োজ্যেষ্ঠ বলেন, সব এলোমেলো করে ফেলে এসেছি। এগুলো থাকে নাকি থাকবে না এটা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। শুধু আমার না, সবারই একই সমস্যা।

বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চট্টগ্রামের মীরসরাই, কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাক্ষণবাড়ীয়ার আখাউড়া, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।

পাহাড়ি ঢলে সীমান্ত জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় ১ হাজার ২০০ পরিবার এখন পানিবন্দি। দুর্গতদের আশ্রয়কেন্দ্র নিয়ে আসার পাশাপাশি পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও স্যালাইন মজুদ রাখার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি বন্যা দুর্গত যারা আছেন তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার এবং ইতোমধ্যেই আমরা ১৫ মেট্রিক টন চাল এবং ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছি। এগুলো বিতরণ শুরু হয়ে গেছে।

বন্যার পানিতে ভাসছে খাগড়াছড়ির দেড় শতাধিক গ্রাম। আটকা পরা বাসিন্দাদের উদ্ধারের পাশাপাশি ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করছে প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও রেড ক্রিসেট।

দীঘিনালার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, ‘এদেরকে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে খিচুড়ির ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও এখানে কাজ করছে।’

সরকারি-বেসরকারি উদ্যাগে বানভাসি মানুষকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা সীমান্তের প্রত্যন্ত এলাকায় বন্যার্তদের নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। ফেনী, কুমিল্লা, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী দুর্গত এলাকায় উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণ বিতরণ ও নদী রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করছে বিজিবি।

বিজিবির একাধিক ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে দুর্গত এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে ফেনীর সীমান্তবর্তী গ্রামের বানভাসিদের নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে নিরাপদ আশ্রয়স্থানে নিচ্ছে বিজিবি। সীমান্তের সবচেয়ে দুর্গত এলাকায় কী ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তা উঠে আসে বিজিবি সদস্যদের বর্ণনায়।

বিজিবির রামগড় ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানান, আমরা নানাভাবে বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা করে যাচ্ছি। আমাদের ব্যাটালিয়নের প্রায় সব সদস্য বন্যাদুর্গত মানুষকে উদ্ধার ও তাদের সহায়তায় নিয়োজিত। রামগড়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি বাড়তে থাকে। এর পরই আমরা মাঠে নেমে পড়েছি। ঢাকা-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের সোনাইপুল বাজার থেকে মহামুনি ব্রিজ পর্যন্ত সড়কে ২-৩ ফুট পানি আছে। এ ছাড়া কয়লার বাজার এলাকায় রাস্তার ওপরে ৫-৬ ফুট পানি রয়েছে। রামগড় পৌরসভা ভবনের আশপাশ ডুবে গেছে। নাকাপা এলাকায় রাস্তার ওপর পাহাড়ধসে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিস বৃহস্পতিবার কাজ শুরু করেছে। ওই এলাকায় সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এদিকে, সাজেকে আটকে পড়া আড়াইশ পর্যটকদের থাকা ও খাবারে ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ছাড় দিয়েছে রিসোর্ট মালিক সমিতি।

এনএইচ