সুপ্রিম কোর্টে বিএনপি ও সরকার সমর্থক আইনজীবীদের মারামারি
Share on:
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের পদ দখল করার প্রতিবাদে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের বিক্ষোভের সময় সরকার সমর্থক আইনজীবীদের সাথে ব্যাপক হাতাহাতি, কিল-ঘুষির, হট্টগোল ও মারামারির ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৮ মে) দুপুর ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদকের কক্ষের সামনে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা ‘ভোট চোর’ স্লোগান দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের নেমপ্লেট ভাংচুর করেন। একই সময় সম্পাদকের কক্ষের দরজা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ করে দেন বিএনপি সমর্থকরা।
এ সময় সরকার সমর্থক আইনজীবীরা বাধা দিলে তাদের সাথে হাতাহাতি ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সরকার সমর্থক কয়েকজন আইনজীবী আহত হন বলে জানা গেছে। এসময় একজন আইনজীবীর শরীর থেকে রক্ত ঝরতেও দেখা যায়।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা স্লোগান দিয়ে চলে যাওয়ার পর সরকার সমর্থক আইনজীবীরা সম্পাদকের কক্ষের সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে ‘অবৈধভাবে সম্পাদকের পদ দখল করে সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার’ প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে শতাধিক বিএনপি সমর্থক আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষের সামনে এসে ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ বলে স্লোগান দেন।
আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল এ বিষয়ে বলেন, ‘জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তারা আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা করে। আমাদের সাহসী নেতাকর্মীদের প্রতিরোধের মুখে তারা পিছু হটতে বাধ্য হয় ‘
তিনি বলেন, ‘স্বঘোষিত সম্পাদক, স্বেচ্ছায় সম্পাদকের কক্ষ থেকে বিদায় না দেয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।’
বুধবার ( ১৮ মে ) বেলা ১টায় সুপ্রিম কোর্ট বার ভবনের সামনে ‘অবৈধভাবে সম্পাদক পদ দখল করে সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্যকে কলঙ্কিত করার’ প্রতিবাদে প্রতিবাদ সভা করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট।
এতে কয়েক শ’ আইনজীবী অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের ঐতিহ্য কলঙ্কিত না করার আহ্বান জানান। প্রতিবাদ সভা শেষে বিক্ষোভ করে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদকের কক্ষের সামনে যান।
প্রতিবাদ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব ফজলুর রহমান বলেন, ‘ভোট ডাকাতি করা, নিশিরাতের এমপি করা কোনো গৌরবের বিষয় নয়। মানুষের শেষ ভরসাস্থল সুপ্রিম কোর্টেও ভোট ডাকাতি করা হয়েছে। এই সরকারের পতন ছাড়া দেশে আর কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমরা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যাবো না।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে। শ্রীলঙ্কার চেয়ে ভয়াবহ আবস্থার সৃষ্টি হবে দেশে।’
তিনি বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আমরা দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এটা না মানা হলে দেশে আন্দোলন সংগ্রাম হবে। রাজপথ উত্তপ্ত হবে।’
বিএনপির আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, ‘যারা তালা ভেঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদকের পদ দখল করেছে, আইনজীবীরা তাদের ক্ষমা করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘ভোট ডাকাতির মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাস কলঙ্কিত করা হয়েছে। এর জন্য যারা দায়ী তারা বর্তমানে যত ক্ষমতাসীন ব্যক্তি হোন না কেন একদিন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে এই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরাই বিচার করবেন।’
তিনি বলেন, ‘দেশে যেভাবে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। একইভাবে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। আইনজীবী সমাজ কখনোই তা মেনে নেবেন না।’
আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের সভাপতি আবদুল জব্বার ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজলের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট বারের ট্রেজারার মো: কামাল হোসেন, সহ-সম্পাদক মো: মাহবুবুর রহমান খান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মনির হোসেন, রাগীব রউফ চৌধুরী, রফিকুল হক তালুকদার রাজা, মোহাম্মদ আলী, মনিরুজ্জামান আসাদ, মির্জা আল মাহমুদ, মু. কাইয়ুম প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বার নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়। গণনা করা হয় গত ১৭ মার্চ। বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা জানান, ভোট গণনায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সমর্থিত প্যানেল থেকে সম্পাদক মো: রুহুল কুদ্দুস কাজল, কোষাধ্যক্ষ, সহ-সম্পাদক ২ জন এবং ৪ জন সদস্যসহ মোট ৮ জন জয়লাভ করেন।
বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত প্যানেল থেকে সভাপতি ২ টি সহ-সভাপতি এবং ৩ জন সদস্যসহ মোট ৬ টি পদে জয়লাভ করে। কিন্তু ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর আওয়ামীপন্থী সম্পাদক প্রার্থী আব্দুন নূর দুলাল ভোট পুনর্গণনার জন্য একটি দরখাস্ত দিয়ে এসে নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ককে ভোট পুনরায় গণনা করার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ফলে নির্বাচন কমিশনের আহ্বায়ক পদত্যাগ করেন। এজন্য দীর্ঘদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা হয়নি।
বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের অভিযোগ, মেয়াদোউত্তীর্ণ কার্যকরী (২০২১-২২) কমিটির আওয়ামীপন্থী ৭ জন সদস্য অবৈধভাবে গত ১২ এপ্রিল নির্বাচন সাব-কমিটি গঠন করেন। অথচ তাদের মেয়াদ ১১ এপ্রিল শেষ হয়ে যায়।
উক্ত অবৈধ সাব-কমিটি ২৭ এপ্রিল অবৈধভাবে জোরপূর্বক সমিতির কনফারেন্স রুমের তালা ভেঙ্গে পুলিশের উপস্থিতিতে ব্যালট ছিনতাই করে আব্দুন নূর দুলালকে সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করে।
এইচএন