ডুবে গেছে সিলেট নগরী, তাজা হচ্ছে বাইশের দুর্বিষহ স্মৃতি
Share on:
অতি ভারী বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পানিতে তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। তাদের স্মৃতিতে তাজা হয়ে উঠছে ২০২২ সালে শত বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করা বন্যার দুর্বিষহ স্মৃতি।
সিলেট আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজিব হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২২৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আর সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৮ মিলিমিটার।
নগরীর তালতলা, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, দাঁড়িয়াপাড়া, বেতেরবাজার, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, পাটানটুলা, ছালিবন্দর, বাগবাড়ি, যতরপুর, কাজিরবাজার, শেখঘাট, কলাপাড়া, পীরমহল্লা, মাছিমপুর, ছড়ারপার, ইলাশকান্দি, উপশহর ও বাদামবাগিচাসহ বেশিরভাগ এলাকার বাসাবাড়িতে পানি ঢুকেছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা।
সিলেট নগরীর লালাদিঘির পার এলাকার মামুন আহমদ বলেন, এমনিতেই ভারত থেকে নেমে আসা উজানি ঢলে সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলায় অবস্থা ভয়াবহ। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি টইটুম্বুর করছে কয়েক দিন থেকে। আজ টানা বৃষ্টিতে আমাদের ঘরে পানি উঠেছে।
জামতলা এলাকার মহিব্বুর রহমান জানান, তার বাসার আসবাবপত্রসহ অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র পানিতে তলিয়ে গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন ২০২২ সালের মতো বন্যা পরিস্থিতি হয় কি না। ভয়াবহ সেই বন্যার পর নদী খনন করা হলে এই পরিস্থিতি হতো না বলে মনে করেন নগরীর এই বাসিন্দা।
নগরের উপকণ্ঠের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত কয়েক দিন ধরে উপশহরের সি ও ডি ব্লকের কয়েকটি সড়কে পানি ছিল। গতকাল কিছুটা কমলেও রাতে উপশহরের সবগুলো ব্লকে এমনকি মূল সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। অনেকে বাসাবাড়ি ছেড়ে রাতেই অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও পানি ঢুকেছে।
বৃষ্টির পানিতে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল হাসপাতালের আঙিনায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও নিচতলায় পানি প্রবেশ করেছে। এতে চিকিৎসাসেবা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে বৃষ্টি হওয়ার কারণে শহরের পানি সুরমা নদীতে নামতে পারছে না। এতে করে শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে শহরের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কার কথা জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উজানের ঢলে সৃষ্ট সিলেট জেলার বিভিন্ন সীমান্ত উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনো সুরমা-কুশিয়ারা পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এই পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ১০ সেন্টিমিটার পানি কমেছে। তবে, সিলেট পয়েন্টে এই ১২ ঘণ্টায় পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
একই সময়ে কুশিয়ারা নদীর পানি অমলীশদ পয়েন্টে ৫৩ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অমলশীদ পয়েন্টে ৩৪ সেন্টিমিটার কমলেও ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বেড়েছে ৭ সেন্টিমিটার।
সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সিলেটে বন্যার্ত মানুষের জন্য চারশ টন চাল ও নগদ ১৫ লাখ ৫০ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এছাড়া এক হাজার ২৫০ বস্তা শুকনো খাবার, ৯ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ৯ লাখ টাকার গো-খাদ্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নামা ঢলে প্রথমে জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট উপজেলার বেশকিছু এলাকায় প্লাবিত হয়। পানির তোড়ে গ্রামীণ সড়ক, ঘরবাড়ি ভেঙে যায়। পানিবন্দি মানুষদের উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবিরা কাজ করেন। বিজিবিও তাদের সহায়তা করে।
এ সময় নদ-নদীর পানি বাড়া অব্যাহত থাকায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে জেলার গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা।
এনএইচ