অর্থপাচারের ৮৫ শতাংশই আমদানি-রপ্তানির আড়ালে : বিএফআইইউ
Share on:
অর্থপাচারের ৮০-৮৫ শতাংশই হচ্ছে আমদানি-রপ্তানির আড়ালে। ব্যাংকিং চ্যানেলে ‘আন্ডার ও ওভার ইনভয়েসের’ মাধ্যমে এসব অর্থপাচার হয়।
ব্যাংক যদি এটি বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতায় ১০ দেশের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সংস্থাটির প্রধান মাসুদ বিশ্বাস।
এসময় বিএফআইইউর নির্বাহী পরিচালক রফিকুল ইসলাম, বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগের পরিচালক সারোয়ার হোসেন, বিএফআইইউর অতিরিক্ত পরিচালক কামাল হোসাইনসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএফআইইউর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, বাণিজ্যের (আমদানি-রপ্তানি) আড়ালে ব্যাংকিং চ্যানেলে আন্ডার ইনভয়েস ও ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে অর্থপাচার হচ্ছে। এর মাধ্যমে পণ্য মূল্যের চেয়ে বেশি দেখিয়ে অর্থ পরিশোধ করা হয়। এ বিপুল পরিমাণ মানি লন্ডারিংয়ের সিংহভাগ হচ্ছে ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংক যদি এটা বন্ধে সহযোগিতা না করে তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যায়। ব্যাংক যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সহযোগিতা করে তাহলে আগেই পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, আমরা এখন জোর দিয়েছি অর্থপাচার আর যেন না হয়। ই-কমার্সের মাধ্যমেও পাচার হয়। কিন্তু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে বিএফআইউ ব্যবসার লাইসেন্স দেয় না। পাচার হয়ে যাওয়ার পর তথ্য দেওয়া হয়, তখন করার কিছু থাকে না। কারণ একবার মানি লন্ডারিং (অর্থপাচার) হলে তা ফেরত আনা কঠিন, ফেরত আসে না। এখানে বহু দেশ, বহু পক্ষ জড়িত থাকে। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা ও সহযোগিতার জন্য ১০ দেশের সঙ্গে এমওইউ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এতে সম্মতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থপাচার বন্ধে ব্যাংকগুলোর বড় ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে বিএফআইইউ প্রধান বলেন, আমদানি-রপ্তানির তথ্য যাচাই-বাছাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ তদারকির কারণে মানি লন্ডারিং কমছে। তবে অর্থপাচার বন্ধে ব্যাংকগুলোর বড় ভূমিকা থাকে। তারা প্রতিটি এলসি যাচাই-বাছাই করলে, তথ্য দিলে অনেকাংশেই বন্ধ হবে।
এ পর্যন্ত বিদেশে পাচার হওয়া কত টাকা ফেরত এসেছে এমন প্রশ্নের জবাবে মাসুদ বিশ্বাস বলেন, মানি লন্ডারিং একটা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম। এখানে বহু পক্ষ, বহু দেশ জড়িত। আমার দেশের আইনের মতো আরেক দেশের আইন এক নয়। এখানে কিছু আছে সিভিল ল’ কান্ট্রির দেশ, কিছু কমন ল’ কান্ট্রির দেশ। তবে একটা উদাহরণ আমাদের কাছে আছে, সিঙ্গাপুরে যে টাকা পাচার হয়েছিল, ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুর ডলার, সেটা ফেরত এনেছি।
বিএফআইইউ প্রতি বছর বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ বছরের প্রতিবেদনে আগের বছরের মতো বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি হুন্ডি, অবৈধ গেমিং/বেটিং, ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং ও ফরেক্স ট্রেডিং প্রতিরোধে বিএফআইইউ কর্তৃক গৃহীত কার্যক্রমের বিষয়ে পৃথক অধ্যায় সংযোজন এবং একাধিক বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে মোট ১৪ হাজার ১০৬টি। এক বছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৫ হাজার ৫৩৫টি। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ৫৭১টি, ২০২০-২১ ছিল ৫ হাজার ২৮০টি। এছাড়া ২০১৯-২০ অর্থবছরে সন্দেহজনক কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৬৭৫টি এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এমন লেনদেন ও কার্যক্রম হয়েছিল ৩ হাজার ৫৭৩টি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরো অর্থবছরে সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৮০৯টি সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট জমা দিয়েছে ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরে ব্যাংকগুলো জমা দিয়েছিল ৭ হাজার ৯৯৯টি। এসময়ে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো রিপোর্ট জমা দেয় ১২১টি এবং এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো ৯০০ রিপোর্ট জমা দিয়েছে। তবে সব সন্দেহজনক লেনদেন (এসটিআর) অপরাধ নয় বলে জানায় বিএফআইইউ।
মাসুদ বিশ্বাস জানান, বিএফআইইউ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৩৩টি আর্থিক গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিভিন্ন তদন্তকারী সংস্থায় প্রেরণ করেছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ৫৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেশি। এছাড়া আলোচিত সময়ে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারি অন্য সংস্থার সঙ্গে এক হাজার ৭১টি তথ্য বিনিময় করেছে, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। বিগত অর্থবছরে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসী কার্যে অর্থায়ন প্রতিরোধ কার্যক্রম জোরদারকরণের ফলে বাংলাদেশ ৫টি দেশকে পেছনে ফেলে র্যাংকিংয়ে বিগত বছরের ৪১ নম্বর দেশ থেকে ৪৬ নম্বরে জায়গা করে নিয়েছে।
এসএম