মোদীর অগণতান্ত্রিক আচরণে বাধাগ্রস্ত হতে পারে অর্থনৈতিক উন্নতি : দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন
Share on:
১৯৯৪ সালে ভারতের সুপ্রিমকোর্ট এক রুলে জানায়, রাজনীতি ও ধর্ম একসঙ্গে চলতে পারে না। ওই রায়ের মাধ্যমে ভারতের অসাম্প্রদায়িক সংবিধানের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে নরেন্দ্র মোদী বিতর্কিত রাম মন্দির উদ্বোধন করেছেন। যা লাইভে দেখেছেন মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ। অসাম্প্রদায়িক ভারতের সংবিধানের কথা তাদের কাছে বলা উচিত।
মূলত টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রচারণার অংশ হিসেবেই ২২০ মিলিয়ন ডলার খরচের মন্দিরটি উদ্বোধন করা হয়। মনে করা হচ্ছে, এটি ভারতের হিন্দুত্ববাদের আধিপত্যের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। তবে এমন পদক্ষেপ ভারতের ২০ কোটি মুসলিম ও অন্যান্য অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের জন্য সতর্কতা।
উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় যখন মন্দির নির্মাণের সঙ্গে অন্যান্য উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে ভারতে। ভারত হলো বিশ্বের দ্রুত বর্ধণশীল অর্থনীতি। একই সঙ্গে এটি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি। জহরলাল নেহেরুর পর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হতে চাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী। তার লক্ষ্য ভারতের অর্থনীতি ও ধর্ম। কিন্তু সমস্যা হলো তার উগ্র হিন্দুত্ববাদ অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্খাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
অযোধ্যার বিষয়টিকে বোঝার জন্য অতীতে ফিরে যেতে হবে। মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি ১৯৯০ সালে সেখানের বাবরি মসজিদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন করে ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন হিন্দু অ্যাক্টিভিস্টদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে তারা, যার মাধ্যমে সংগঠিত হয় ধ্বংসযজ্ঞ। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সংগঠিত হয় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা।
মসজিদের স্থানে নির্মিত ব্যয়বহুল হিন্দু মন্দিরটি এরই মধ্যে উদ্বোধন করেছেন নরেন্দ্র মোদী। ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার নায়ক মোদী গত ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন। কিন্তু দলের আগের নেতাদের মতো মোদীকে সংযত মনে হচ্ছে না।
বিজেপির উগ্রবাদীদের ক্ষমতায়িত করা হচ্ছে। মুসলিমদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটছে। বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে অ্যান্টি কনভার্সন আইন পাস হয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বৈষম্যের বিষয়টিকে সামনে এনে মুসলিম ভীতিকে বাড়িয়ে তুলেছেন মোদী। তার এক রোখা মনোভাবের কারণে ভারতের ঐতিহ্যবাহী অনেক প্রতিষ্ঠানই চাপের মুখে। বিশেষ করে গণমাধ্যম, চ্যারিটিজ, থিংক ট্যাঙ্ক, কিছু আদালত ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতা।
অনেকটা নিশ্চিতভাবেই বলা যাচ্ছে বিজেপি ও মোদী টানা তৃতীয়বারের মতো লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করতে যাচ্ছেন। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে হিন্দুত্ববাদের প্রজেক্ট আরও বাড়তে পারে। মুসলিম পরিবার আইনের কিছু ধারা সংবিধান থেকে বাতিল করতে চান মোদী।
বাস্তবতা হচ্ছে, অর্থনৈতিক অগ্রসারের মধ্যে ভারতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগ্রাম চলছে। সাম্প্রতিক প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ পর্যন্ত অতিক্রম করেছে। পরিবহণ অবকাঠামো, বিশাল ও গভীর ইকুইটি বাজার, শক্তিশালী ব্যাংক, বিশাল মুদ্রার রিজার্ভ, কম জটিল কর ব্যবস্থা ও কম দুর্নীতির ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। প্রযুক্তি ও সার্ভিসখাতেও দেশটির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে।
তবে মোদী যদি তার তৃতীয় মেয়াদেও হিন্দুত্ব ও স্বৈরাচারী শাসনের দিকে আরও ঝুঁকতে থাকেন অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। বিভাজন বাড়তে পার উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যে। ভারতের সমৃদ্ধির বেশি প্রভাব পড়তে পারে দক্ষিণে। উত্তর থেকে বাড়তে পারে শ্রমিকের সংখ্যা। তবে হিন্দুত্ববাদের আবেদনে খুব একটা আগ্রহ নেই দক্ষিণ ভারতে। ক্ষমতার বিস্তার বাড়াতে মোদী তার ধ্যান-ধারণার পরিধি বাড়াতে পারেন।
মোদীর একটি বড় অতীত রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেখানে তিনি চেষ্টা করেছিলেন হিন্দুত্ববাদের চাদর থেকে বের করে এনে নিজেকে রিব্র্যান্ডিং করার। যেহেতু তার তৃতীয় মেয়াদ আসন্ন তাই তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে অর্থাৎ ভারতকে শক্তিধর রাষ্ট্র করতে হলে ভারসাম্যমূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। মোদী যদি এক দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ হন তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারতের অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
এনএইচ