টি-টোয়েন্টিতে এক ব্যতিক্রমী আসর দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব
Share on:
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ১৫ বছরের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী আসর দেখছে ক্রিকেট বিশ্ব।
শর্টার ফরম্যাটে ব্যাটার নয় ছড়ি ঘোরাচ্ছে বোলাররা। বড় রান না আসায় মাইকেল ভন, মিকি আর্থারদের কাছে বিশ্বকাপের উইকেট এরইমধ্যে কাঠগড়ায়।
তবে সহযোগী দেশগুলো তাদের বোলিংয়ে বড় দলগুলোকে যে খাবি খাওয়াতে পারে তার প্রমাণ প্রায়ই দেখা গেছে এবারের আসরে। তাহলে কোন স্বার্থে টি-টোয়েন্টি শুধুই ব্যাটারদের গেম হলো?
ম্যাচ হেরে নেপাল ক্যাপ্টেনের মাথায় হাত, আর দলকে জিতিয়ে তানিজমের শূন্যে লাফ। শুধু তানজিমই নন, এই দাপটে সাকিব থেকে মোস্তাফিজ, তাসকিন থেকে রিশাদ সবাই যেন একেকটা আগুন।
তবে সুপার এইটে উঠলেও টাইগারদের ব্যাটিং নিয়ে সন্তুষ্টি যেন ঠিকঠাক মিলছেই না। তানিজদ, লিটন, শান্ত, জাকের- কেউ লড়ছেন রান তুলতে, কেউ স্ট্রাগল করছেন ধারাবাহিকতা পেতে। গ্রুপ পর্বে অনেকটা একই দশা ছিলো সাউথ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান আর ইন্ডিয়ার। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক ব্যাটারদের এই রান খরার সব দোষই কি তাদের?
এবারের বিশ্বকাপে বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে উইকেট। রানের জন্য যেখানে ঘাম ছুটছে ব্যাটারদের। পাকিস্তানের সাবেক কোচ মিকি আর্থারের চোখে বিশ্বকাপের পিচ ভেরি পুউর, সাবেক ইংলিশ ক্যাপ্টেন মাইকেল ভনের কাছে শকিং, ওয়াসিম জাফরের জন্য টি-২০ নয়, যা টেস্টের আদর্শ উইকেট। কিন্তু কথা যখন আসে ক্রিকেটিং এক্সাইটমেটের, তখন এই আলেমীয় কথা কতটা যৌক্তিক।
প্রথমেই চিন্তা করুন, বাংলাদেশ বনাম নেপাল, যুক্তরাষ্ট্র বনাম পাকিস্তান, আফগানিস্তান বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচ। কদিন আগেও এই ম্যাচগুলোতে জয়ী দলের নাম আগেভাগেই চোখ বুজে বলা যেতো। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে সব হিসাব পাল্টেছে। লো প্রোফাইল ম্যাচও হয়েছে হাই ভোল্টেজ। এক্সাইটমেন্টের বিচারে যা ছিল একশ তে একশ।
দ্বিতীয়ত ক্রিকেটের বিশ্বায়ন। ক্রিকেটের অভিভাবক হিসেবে আইসিসির ১১৫ বছরের পথচলায় ফুল মেম্বার কান্ট্রি মাত্র ১২ টা। যেখানে সমসাময়িক সময়ে প্রতিষ্ঠিত ফিফার সদস্য দেশ ২১১। ক্রিকেটের বিশ্বায়ন করতে গেলে যেখানে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড করা দরকার, সেখানে আইসিসির উঠবস হয় বড় দলগুলোর কথায়। তাদের প্রেসক্রিপশনেই মূলত টি-টোয়েন্টিকে হয়ে উঠেছে ব্যাটারস গেম।
অথচ উইকেট যদি ব্যাটিং না হয়ে বোলিং ফ্রেন্ডলি হয়, তাহলে ছোট দলগুলোও যে ভয়ংকর হতে পারে, বড় দলকে নাকানি চুবানি খাওয়াতে পারে তার উদাহরণ এবারের বিশ্বকাপ। পাকিস্তানের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের জয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আফগানিস্তানের বিগ উইন, বাংলাদেশের চোখে চোখ রেখে নেপালের লড়ে যাওয়া তারই প্রমাণ।
মূলত টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিংকে প্রায়োরিটি দেয়ায় বোলাররা এই ফরম্যাটে হয়ে গেছে সৎ সন্তান। কিন্তু বোলিংও যে ক্রিকেটের একটা পার্ট, চার-ছক্কার মতো উইকেট পড়াতেও যে আনন্দ আছে-সেটা বেমালুম ভুলে গেছে এখনকার সময়ের হাইব্রিড ক্রিকেট বোদ্ধারা।
প্রশ্ন হলো, ১২০ বলের খেলায় যদি ব্যাটারদের জন্য ২০০ রানের পিচ বানানো জায়েজ হয়, তাহলে বোলারদের জন্য একশ রানের পিচ বানালে সমস্যা কোথায়? ক্রিকেট মোড়লরা কি নেপাল-যুক্তরাষ্ট্রের মতো অ্যাসোসিয়েট দলগুলোর বোলিংয়ে ভীত? তাই কি ব্যাটিং পিচেই ক্রিকেটকে নিজেদের সম্পত্তি বানাতে চায় ওরা?
সবশেষে এটাও মনে রাখা জরুরি ক্রিকেট শুধু ১২টা দেশের খেলা নয়, এখানে ৯৬টা সহযোগী দেশও আছে।
এসএম