tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ০৬ জুন ২০২৪, ০৮:২০ এএম

তিন কারণে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় সংসদ সদস্য আনারকে


shimul-and-anar-20240606041524

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন শিমুল ভূঁইয়া। জবানবন্দি ও ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে—আনার হত্যার নেপথ্যে ছিল তিন কারণ।


শিমুল ভূঁইয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেছেন, আনার হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী পলাতক আখতারুজ্জামান শাহিন। তার সঙ্গে আনারের হুন্ডি কারবার নিয়ন্ত্রণ ও সীমান্তে স্বর্ণ চোরাচালান নিয়ে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব ছিল। এছাড়া শিমুল ভূঁইয়ার সঙ্গে চরমপন্থা ও রাজনৈতিক আদর্শগত বিরোধ ছিল।

এর আগে দ্বিতীয় দফায় পাঁচদিনের রিমান্ড শেষে শিমুল ভূঁইয়াকে বুধবার (৫ জুন) আদালতে হাজির করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট ডিএমপির ওয়ারী গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) তোফাজ্জল হোসেন শিমুল ভূঁইয়ার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ নিয়ে এই হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার তিনজনই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

তার আগে মঙ্গলবার (৪ জুন) আদালতে জবানবন্দি দেন শিমুল ভূঁইয়ার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, পেশাদার অপরাধী শিমুলের সঙ্গে তানভীরও এই খুনে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করেছেন। তিনি আনারকে বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যায় অংশ নেন।

এছাড়া গত সোমবার (৩ জুন) আদালতে জবানবন্দি দেন আরেক আসামি শিলাস্তি রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও এমপি আনারের বন্ধু আখতারুজ্জামান শাহিন হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী। স্বর্ণ চোরাচালান ও হুন্ডি কারবার নিয়ে এমপি আনারের সঙ্গে শাহিনের বিরোধ ছিল। এই বিরোধের জেরে আনারকে হত্যার জন্য শাহিন ও শিমুল ভূঁইয়া দফায় দফায় বৈঠক করে হত্যার ছক চূড়ান্ত করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে উঠে এসেছে, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তানভীর গত ৬ মে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে সল্টলেক ও নিউ টাউনের মাঝামাঝি এলাকায় ত্রিশিব হোটেলে ওঠেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী এমপি আনারকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এরও আগে ৩০ এপ্রিল কলকাতায় পৌঁছান ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত আখতারুজ্জামান শাহিন। শাহিনের সঙ্গে কলকাতায় যান বান্ধবী শিলাস্তি রহমান ও শিমুল ভূঁইয়া। সবাই ওঠেন আখতারুজ্জামানের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে। শিলাস্তি নিজে খুনে জড়িত থাকার কথা স্বীকার না করলেও ঘটনার দিন তিনি ওই ফ্ল্যাটেই ছিলেন বলে জবানবন্দিতে বলেন।

খুনের আগে কলকাতায় নিউমার্কেট থেকে পলিথিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনা হয়। শিলাস্তি দাবি করেছেন, তিনি এসব কেনার কারণ জানতে চেয়েছিলেন। এসব সামগ্রীর মান বাংলাদেশের চেয়ে ভালো, তাই কেনা হচ্ছে বলে তখন তাকে জানানো হয়।

পুলিশ বলছে, সংসদ সদস্য আনার কলকাতা যান ১২ মে। সেখানে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ওঠেন। পরদিন তাকে প্রলুব্ধ করে নিউ টাউনের ওই ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়। তখন ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত ছিলেন শিলাস্তি, শিমুল, তানভীর, সহযোগী জিহাদ হাওলাদার, সিয়াম হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী। খুনের আগেই আখতারুজ্জামান শাহিন ঢাকায় চলে আসেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটেই সংসদ সদস্যকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টুকরা টুকরা করে গুম করা হয়। তানভীর নিজে বালিশচাপা দেন বলে জবানবন্দিতে বলেন।

এ ঘটনায় জিহাদ হাওলাদার কলকাতায় গ্রেপ্তার ও সিয়াম নেপালে আটক আছেন। সিয়ামকে ফেরাতে গত শনিবার ঢাকা থেকে পুলিশের একটি তদন্ত দল নেপালে গিয়ে সোমবার ফিরলেও সিয়ামকে ফেরানোর অগ্রগতি হয়নি।

শিমুলের জবানবন্দিতে আনার হত্যার তিন কারণ

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিমুল ভুঁইয়া বলেন, এমপি আনারকে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন তিনি। কলকাতায় হত্যা মিশন শেষ করে গত ১৫ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

তিনি ছিলেন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) একজন শীর্ষ নেতা। খুলনা, ঝিনাইদহ ও যশোরে সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণকারী। এ কাজে বাধা ছিলেন এমপি আনার। এরমধ্যে আখতারুজ্জামান শাহিন খুনের পরিকল্পনা করলে শিমুল রাজি হয় ও যৌথভাবে আনারকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থী সংগঠন পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (লাল পতাকা) প্রধান নেতা ছিলেন ডা. মিজানুর রহমান টুটুল। ২০০৮ সালের জুলাইতে তিনি ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। টুটুল শিমুল ভূঁইয়ার আপন বোনের স্বামী এবং আখতারুজ্জামান শাহিনের চাচাতো ভাই।

সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার আগে সংসদ সদস্য আনারের সঙ্গে পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (জনযুদ্ধ) সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। যারা ছিলেন টুটুলের বিরোধী পক্ষ। শিমুল ও শাহিনের ধারণা, ওই যোগাযোগের সূত্র ধরেই এমপি আনার টুটুলকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিয়েছে। এজন্যই শাহিন এমপি আনারকে হত্যার দায়িত্ব দিতে শাহিন রাজি হন।

এনএইচ