জনগণের ভালো চাইলে পদত্যাগ করুন: প্রধানমন্ত্রীকে রিজভী
Share on:
জনগণের ভালো চাইলে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আজ রোববার বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে রিজভী বলেছেন, ‘যদি জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে চান, তাহলে জনগণকে তাদের ক্ষমতাটুকু দিয়ে দেন। নিজের মতো করে সাজিয়ে নেওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে জনগণের ওপর যে অত্যাচার করছেন, তা বন্ধ করুন আর পদত্যাগ করুন। নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। সেই সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। জনগণ বেছে নেবে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন কে করবে।’
এদিন নরসিংদীতে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা করি জনগণের জন্য কাজ। আর বিএনপি-জামায়াত জোট জানে ধ্বংস করা। মানুষের দিকে নজর নেই, তাদের অবহেলা করবে। আমাদের কাজ মানুষের কল্যাণ করা।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন রেখে রিজভী বলেন, ‘জনগণের ভাগ্য উন্নয়ন করতে চাইলে জনগণ কাকে পছন্দ করে, কাকে চায়, সেই ব্যবস্থা করছেন না কেন? জনগণ কাদের দিয়ে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটাবে, আপনি সেই রাস্তাই তো বন্ধ করে দিচ্ছেন। অর্থাৎ সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের রাস্তা আপনি বন্ধ করে দিয়েছেন। জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দায়িত্ব আপনি একাই নিতে থাকবেন? নির্বাচন ধ্বংস করেছেন, ভোট ধ্বংস করেছেন। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যায় না।’
রিজভী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন আপনি ধ্বংস করেছেন। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীন যে সত্তা, তার অল্প কিছু ক্ষমতা আছে। ৮০ শতাংশ ক্ষমতা সরকার নিয়ে নিয়েছে। প্রতিষ্ঠান ভাঙার খেলা চালিয়েছেন গত ১৫ বছর। গুম, খুন, গুপ্ত হত্যা আর প্রতিষ্ঠান ভেঙে, জনগণের টাকা পাচার করার পর আপনি এখন কান্না করছেন, এটা মানুষ বিশ্বাস করে না। এটাকে কুমিরের কান্নাই মনে করে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।’
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এরই মধ্যে দেশব্যাপী তিন দফায় সাত দিন সর্বাত্মক অবরোধের কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। আজ রোববার সকাল থেকে চতুর্থ দফায় আবারও ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেছে দলটি। এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির দরজায় কড়া নাড়ছে বিজয়ের হাতছানি। জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে সর্বাত্মক অবরোধে অচল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। আর ভোট ডাকাত আওয়ামী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে জনগণের আদালতের কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখি হওয়ার।’
রিজভী বলেন, ‘জনগণের শান্তিপূর্ণ দুর্বার আন্দোলন ঠেকাতে শেখ হাসিনা নব্য নাৎসি কায়দায় অতীতের মতো আবারও নতুন করে গুমের উৎসব শুরু করেছে। প্রতিটি শহর-বন্দর-জনপদে এখন সাদাপোশাকধারীদের হাড় হিম করা আতঙ্ক। চারদিকে ভয়ার্ত পরিবেশ। যেন হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে বাংলাদেশের বুকে।’
গ্রেপ্তার, মামলাসহ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নানা নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিএনপির এই নেতা বলেন, ময়মনসিংহ জেলার গৌরীপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. স্বপন শনিবার ডিবি পুলিশের তাড়া খেয়ে পুকুরে ঝাঁপ দেন। পুকুরে বিদ্যুতায়িত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনাকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করে এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন রিজভী।
গ্রেপ্তার-মামলার চিত্র তুলে ধরে রিজভী বলেন, এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৩৬৫ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময়ে প্রায় দেড় হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে, মামলা হয়েছে ১৩টি। বিভিন্ন হামলায় অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন এবং একজন মারা গেছেন।
এনএইচ