সরছেন বাইডেন? কপাল খুলছে হ্যারিসের?
Share on:
যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে দলের ভেতরে ও বাইরে প্রচণ্ড চাপের মুখোমুখি হয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এমন পরিস্থিতিতে তিনি যদি পুনর্নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রচার-প্রচারণা থেকে সরে যান কিংবা প্রচার না চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে তার বিকল্প কে হবেন, সেই প্রশ্ন করছেন অনেকে। তবে জো বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাট শিবিরের একাধিক সূত্র বলেছে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে জো বাইডেন নিজেকে প্রত্যাহার করে নিলে, তার স্থলাভিষিক্ত হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার শীর্ষ বিকল্প হবেন বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস।
জো বাইডেনের প্রচার শিবির, হোয়াইট হাউস এবং ডেমোক্র্যাটিক ন্যাশনাল কমিটির অন্তত সাতটি জ্যেষ্ঠ সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে বলে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গত সপ্তাহে রিপাবলিকান দলীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রথম-বিতর্কে বাইডেনকে অস্বস্তিকর, অসংলগ্ন এবং ব্যাপকভাবে আতঙ্কিত দেখা যাওয়ার পর ডেমোক্র্যাটিক পার্টিতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
যে কারণে তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত নাও হতে পারেন বলে ডেমোক্র্যাট শিবিরে ধারণা তৈরি হয়েছে। এর ফলে ডেমোক্র্যাটের শীর্ষ সহযোগীরা জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বানও জানিয়েছেন। কিছু প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাট বাইডেনের বিকল্প হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে সামনে আনছেন।
আর এই প্রভাবশালী ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে আছেন মন্ত্রিসভার সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার আইনপ্রণেতা গ্যাভিন নিউসোম, মিশিগানের গ্রেচেন হুইটমার এবং পেনসিলভানিয়ার জোশ শাপিরোর মতো ডেমোক্র্যাটিক গভর্নররা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেমোক্র্যাটের একাধিক সূত্র বলেছে, আসন্ন নির্বাচনে কমলা হ্যারিসকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চিন্তাভাবনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে।
সূত্র বলেছে, ডেমোক্র্যাট দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ৫৯ বছর বয়সী হ্যারিসের নাম ঘোষণা করা হলে তিনি বাইডেনের প্রচার শিবিরের সংগৃহীত তহবিল ও প্রচার কার্যক্রমে স্থলাভিষিক্ত হবেন। ডেমোক্র্যাট শিবিরের সম্ভাব্য সব বিকল্প প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি রয়েছে কমলা হ্যারিসের।
মঙ্গলবার রয়টার্স/ইপসোসের প্রকাশিত মতামত জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কমলা হ্যারিসের জনসমর্থনের পার্থক্য মাত্র এক শতাংশ ছিল। জরিপে ট্রাম্প ৪৩ এবং হ্যারিস ৪২ পয়েন্ট পেয়েছেন; পরিসংখ্যানগত দিক থেকে হ্যারিসের এই অবস্থান বাইডেনের মতোই শক্তিশালী।
ডেমোক্র্যাটের সূত্রগুলো বলেছে, কমলা হ্যারিস ইতোমধ্যে জাতীয় অফিসে তার সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন এবং রিপাবলিকানদের তীব্র তদন্ত থেকেও বেঁচে গেছেন। এছাড়াও বাইডেনের ২০২০ সালের নির্বাচনে জয়ের মূল চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করা মার্কিন আইনপ্রণেতা জিম ক্লাইবার্ন এমএসএনবিসিকে বলেছেন, বাইডেন সরে গেলে তিনি ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কমলা হ্যারিসকে সমর্থন জানাবেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্র্যাট দলীয় কৌশলবিদ মাইকেল ট্রুজিলো বলেছেন, ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে অন্য কারও মনোনয়ন জেতা প্রায় অসম্ভব। ২০০৮ ও ২০১৬ সালে হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচনী প্রচার শিবিরে কাজ করেছিলেন ট্রুজিলো।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারিন জ্যঁ-পিয়েরে বলেছেন, প্রথম বিতর্কে বাইডেনের জন্য কেবল একটি ‘‘খারাপ রাত’’ ছিল এবং তিনি আমেরিকান জনগণের রায়ে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার জন্য তার কাজ চালিয়ে যাবেন।
এদিকে, ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সহযোগীরা ডেমোক্র্যাটিক দলীয় টিকেটের সব ধরনের আলোচনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। হ্যারিসের কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভাইস প্রেসিডেন্ট হ্যারিস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।
এছাড়া বাইডেন-ট্রাম্পের প্রথম বিতর্কের পর অনেক জল্পনা-কল্পনা দেখা দিলেও কমলা হ্যারিসের সামর্থ্য নিয়েও অনেকে সন্দেহ করছেন। কারণ ট্রাম্পকে তিনি হারাতে পারবেন, প্রভাবশালী কিছু ডেমোক্র্যাট তা বিশ্বাস করেন না বলেও দলটির চারটি সূত্র জানিয়েছে।
১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের ওকল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন কমলা হ্যারিস। তার বাবা জ্যামাইকান ও মা ভারতীয়। ১৯৯০ সালে ওকল্যান্ডের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কর্মজীবনের শুরু হয় তার। ২০১০ সালে প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান হিসেবে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল পদে জয়ী হন কমলা।
পরে ২০১৬ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর নির্বাচিত হয়ে পা রাখেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে। ২০২০ সালের নভেম্বরে অনেক প্রথমের রেকর্ড গড়ে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তিনি। পরে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে প্রথম নারী, প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ এবং প্রথম দক্ষিণ এশীয় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন তিনি।
এমএইচ