ক্যারিবিয়ান ঝড়ে বিধ্বস্ত ভারত
Share on:
সিরিজে দারুণ রোমাঞ্চ তৈরি হয়েছিলো। প্রথম দুই ম্যাচ জিতেছিলো স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের দুই ম্যাচ জিতেছিলো ভারত। ২-২ ম্যাচে যখন সিরিজে সমতা, তখন শেষ ম্যাচটি পরিণত হয়েছিলো অঘোষিত ফাইনালে। টি-টোয়েন্টির দুই পরাশক্তির ফাইনালের লড়াইয়ে জয় হলো ওয়েস্ট ইন্ডিজেরই। শেষ ম্যাচে ভারতকে ১২ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ৩-২ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিলো ক্যারিবীয়রা।
মূলত ব্রেন্ডন কিংয়ের হাতেই বিধ্বস্ত হতে হয়েছে হার্দিক পান্ডিয়ার দলকে। তার ৫৫ রানে অপরাজিত ৮৫ রানের ঝোড়ো ইনিংসের ওপর ভর করেই অসাধারণ জয়টি তুলে নেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ফ্লোরিডার লডারহিলে অনুষ্ঠিত সিরিজের শেষ এই ম্যাচটিতে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে ভারত। সুর্যকুমার যাদব ছাড়া ভারতের আর কোনো ব্যাটারই দাঁড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রান সংগ্রহ করে ভারত।
জবাব দিতে নেমে ওপেনার ব্রেন্ডন কিংয়ের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সঙ্গে যোগ হয় নিকোলাস পুরানের ৩৫ বলে ৪৭ রানের ইনিংস যোগ হলে ১৮ ওভারে ২ উইকেট হারিয়েই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ছক্কা মেরে ক্যারিবীয়দের জয় এনে দিলেন শাই হোপ।
টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন ভারত অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। ব্যাট করার যুক্তি হিসেবে দেখিয়েছিলেন, আগে ব্যাট করে নিজেদের চ্যালেঞ্জ করতে চান তারা। কিন্তু ফ্লোরিডার মাঠে দু’দিনের ব্যবধানে ভারতের শুরুটা হল দুই রকম।
শনিবার ফ্লোরিডার মাঠে ওপেনারদের দাপট দেখা যায়, তা হলে রোববার দুই ওপেনার ফিরে গেলেন ১৭ রানের মধ্যেই। প্রথম ওভারেই আউট হন জশস্বি জয়সওয়াল। দ্বিতীয় বলে চার মেরে শুরুটা ভালই করেছিলেন; কিন্তু চতুর্থ বলেই আকিল হোসেনকে মারতে গিয়ে তার হাতেই ক্যাচ তুলে দিলেন।
শুভমান গিলও খেলতে পারলেন না। ব্যাটে-বলে সংযোগ হচ্ছে না বুঝতে পেরেও অকারণে হাঁটু মুড়ে সুইপ করতে গেলেন। আকিল হোসেনের সোজা বল এসে লাগল তার প্যাডে। দুই ওপেনারকে হারিয়ে তখন কিছুটা চাপেই পড়ে গিয়েছিল ভারত। সেই চাপ কাটিয়ে দেন সূর্যকুমার যাদব এবং তিলক বার্মা।
টি-টোয়েন্টিতে সূর্যকুমারকে নিয়ে এমনিতেই কোনও প্রশ্ন নেই। কিন্তু সুযোগ পেয়ে আবার নিজেকে মেলে ধরলেন তিলক বার্মা। যেভাবে তিনি সূর্যকুমারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে একের পর এক শট খেললেন, তা প্রশংসনীয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আউট হলেন তিনি। রোস্টন চেজের গুড লেংথ বল ব্যাটের একটু আগে পড়েছিল। স্লোয়ার বল ঠিক করে বুঝতে পারেননি তিলক। সোজা ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন। ডান দিকে অনেকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাল ক্যাচ নেন চেজ।
পাঁচে নামা সাঞ্জুর কাছে সুযোগ ছিল মঞ্চটা কাজে লাগানোর; কিন্তু আবারও ব্যর্থ কেরলের এই ব্যাটার। সুযোগ পেয়ে তিনি তা হেলায় হারালেন। শুরুটা ভাল হয়েছিল। সূর্যকুমারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যেতে পারলে আরও বেশি রান উঠতে পারত ভারতের। সাঞ্জু হেলায় সেই সুযোগ নষ্ট করলেন। রোমারিও শেফার্ডের স্লোয়ারে সহজ ক্যাচ দিলেন উইকেটরক্ষক নিকোলাস পুরানের হাতে।
হার্দিক পান্ডিয়ার শুরুটা ভাল হয়নি। উল্টো দিকে সূর্য চালিয়ে খেলতে থাকায় হার্দিকের ধীরগতির ইনিংস অতটা চোখেও পড়ছিল না। ১৮ বলে ১৪ করে ফেরেন তিনি। এরপর সূর্য আউট হতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে ভারতের ইনিংস। মাঝে দু’বার অল্প সময়ের জন্যে বৃষ্টি এসে খেলা থামিয়েছে। কিন্তু ভারতের ভাগ্য তাতে ফেরেনি। ১৬৫ রানেই আটকে যায় তাদের ইনিংস।
জবাব দিতে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালোই সূচনা করে। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারেই মারমুখী কাইল মায়ার্সকে তুলে নেন আরশদিপ সিং। তবে দ্বিতীয় উইকেটে চালিয়ে খেলতে থাকেন ব্রেন্ডন কিং এবং পুরান। ওখানেই ম্যাচ বেরিয়ে যায় ভারতের হাত থেকে। একমাত্র কুলদিপ যাদব রানের গতি কিছুটা থামান। তাকে খেলতে গিয়ে সমস্যা পড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ক্রিকেটার। ভারতের আর কোনও বোলারকে খেলতে সমস্যা হয়নি। ছয় মেরে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন কিং।
লক্ষ্যমাত্রার যখন আর ৫১ রান বাকি, তখনই বৃষ্টি এসে বন্ধ করে খেলা। বৃষ্টির গতিবেগ ছিল না। কিন্তু মাঠের প্রচণ্ড বিদ্যুৎ চমকাচ্ছিল। ফলে আম্পায়াররা খেলা শুরু করতে চাইছিলেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর খেলা শুরু হয়। এরপরই চমকে দেন হার্দিক। বল করতে আনেন তিলক বার্মাকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো বটেই, আইপিএলেও আগে বল করেননি তিলক। কিন্তু এ দিন প্রথম বলে প্রায় আউট করে ফেলেছিলেন পুরানকে। অল্পের জন্যে সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরের বলে ফিরে যান পুরান। রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন। বল ব্যাটে লাগায় ডিআরএসে এলবিডব্লিউ হয়নি। কিন্তু লেগ স্লিপে দাঁড়ানো হার্দিক ক্যাচ নেওয়ায় আউট হন পুরান।
পরের দিকে আরও একটি উইকেট পেতে পারতেন। নিজের বোলিংয়ে কিংয়ের সহজ ক্যাচ ফেলে দেন তিলক। শেষ দিকে আরও একটি চমক দেন হার্দিক। বল করান জশস্বিকে দিয়েও। ততক্ষণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পকেটে চলে গিয়েছিল ম্যাচ।
এমআই