tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
জাতীয় প্রকাশনার সময়: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৭:০৭ পিএম

প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনো বহাল বিদায়ি সরকারের ঘনিষ্ঠরা


741

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের বেশিরভাগের পদায়ন হয়েছে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। এছাড়া বিগত ১৫ বছরে যারা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের এখন পদোন্নতি দেওয়া হলেও অদ্যাবধি পদায়ন হয়নি অধিকাংশের।


এদিকে কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসনে নীরব অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে গোটা প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল রয়েছেন সদ্য বিদায়ি আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠরা।

শুধু তাই নয়, নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও নানা দাবি নিয়ে সব সময়ই সরব। মূলত এসব কারণেই প্রশাসনের প্রায় সবস্তরেরর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে একরকম চাপ ক্ষোভ ও অস্বস্তি।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ-প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে বিগত সরকারের সুবিধাভোগী কয়েকজন দায়িত্ব পালন করছেন। তারাই প্রশাসনের যাবতীয় কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কৌশলে বাধা সৃষ্টি করছেন। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানা গেছে, বিগত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া ছয় বিভাগীয় কমিশনার আছেন বহাল তবিয়তে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার পদেও কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বিভিন্ন জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিলেও তাদের কারও কারও বিরুদ্ধে বিগত সরকারের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়া আগের পদোন্নতি বঞ্চিতরা অন্তবর্বর্তী সরকারের সময় পদোন্নতি পেলেও তারা ফ্যাসিবাদের দোসরদের অধীনে দায়িত্ব পালনে অনাগ্রহ প্রকাশ করছেন।

উল্লিখিত বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আগের চেয়ে পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়নের কাজ চলছে। তাদের বিষয়ে এজেন্সির (গোয়েন্দা) প্রতিবেদন এলেই পদায়ন শুরু হবে। পদোন্নতির আগে এই প্রতিবেদন সংগ্রহের নিয়ম থাকলেও তড়িঘড়ি করে পদোন্নতি দেওয়ায় তা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তিনি আরও বলেন, একটু অপেক্ষা করুন গোটা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। দীর্ঘ দুঃশাসনের পরিবর্তনের পর একটু সমস্যা হবেই। এটা প্রশাসনিক কাজে বাধা হওয়ার মতো কিছু নয়।

সিনিয়র সচিব বলেন, যারা অবসরে চলেই যাচ্ছিলেন, তাদের রাতারাতি পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ধৈর্য নেই, শোকরিয়া নেই। নিয়মকানুন মানতে চান না। মাঠ প্রশাসনে অস্থিরতা প্রসঙ্গে সিনিয়র সচিব বলেন, অসৎ আর অযোগ্য লোকে ভরে গেছে প্রশাসন। চেষ্টা করছি বাছাই করে ভালো অফিসার বের করে বিভাগীয় কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার। একটু সময় লাগবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পদোন্নতিপ্রাপ্তদের পদায়ন হচ্ছে ধীরগতিতে। নিয়ম অনুসারে পদোন্নতির আগে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিঅর), শৃঙ্খলা প্রতিবেদন, জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (এনএসআই), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি), জেলা প্রশাসকের (ডিসি) প্রতিবেদন নেওয়ার বিধান রয়েছে।

৫ আগস্টের পর দ্রুততম সময়ে পদোন্নতি দেওয়ায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন নেওয়া হয়নি। এখন সেগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে যাদের প্রতিবেদন পাওয়া গেছে তাদের পদায়ন শুরু হয়েছে। দীর্ঘ সময় বঞ্চিত থাকার পর পদোন্নতি পাওয়া কর্মকর্তারা বলছেন, প্রশাসন চাইলে এসব কোনো বিষয় নয়। ধীরে পদায়ন প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাব। তারা উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল উপ-সচিব নূরুল কবির ভূঁইয়ার। সে বিগত সরকারের সময় পদোন্নতি বঞ্চিতও। তাকে মঙ্গলবার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পদ পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক হিসাবে বদলি করা হয়েছে।

৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে দেশ ত্যাগের পর থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা এবং রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে বদলি করা হয়েছে। এছাড়া ৬ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনাররা বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন। এ নিয়ে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদেও তেমন কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। অকারণে দীর্ঘ সময় যাদের পদোন্নতি ও গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন বঞ্চিত করা হয়েছে তারা বলছেন, বিভাগীয় কমিশনার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা সরাসরি নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত। চলতি বছর জানুয়ারিতে পাতানো নির্বাচনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে তারা প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছেন। স্বৈরাচারের পতন হলেও তার দোসররা এখনও স্বপদে বহাল। তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরানো না গেলে প্রশাসন সচল হবে না।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলার ডিসির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয়রা। তারা ডিসিদের প্রত্যাহার চেয়েছেন। সদ্য নিয়োগ পাওয়া ডিসিদেরও মানতে নারাজ সাধারণ মানুষ। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। কিছু কর্মকর্তার বিতর্কিত ভূমিকা প্রশাসনকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করে কর্মকর্তারা জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। সর্বাবস্থায় জনস্বার্থের অনুকূলে থাকার নিয়ম থাকলেও তারা একটি দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। ছাত্র-জনতার যৌক্তিক আন্দোলনকে তৎকালীন ডিসিরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসাবে চালিয়ে দিয়েছেন। যে কারণে প্রশাসন সম্পর্কে জনগণের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। যার পরিণতিতে ডিসিদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন হচ্ছে। তবে বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় প্রশাসন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সাবেক সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত। তারা বিগত সরকারের নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় সতীর্থ। তাদের সরানোর দৃশ্যমান তেমন কোনো উদ্যোগই নেই বলে দাবি করছেন আগের সরকারের বঞ্চিত কর্মকর্তারা।

এদিকে সচিবালয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বেশ তৎপর। এর মধ্যে রয়েছে-পদোন্নতি, বেতন বৈষম্য দূর করা, নিয়োগবিধির বিদ্যমান বিধান পরিবর্তন ইত্যাদি। তারা বলছেন, ২০১৫ সালে পে-স্কেল ঘোষণার পর থেকে একই বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে। কিন্তু বিগত ১০ বছরে নিত্যপণ্যের বাজারদর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। সাধারণত ৮ বছর পর পে-স্কেল পর্যালোচন হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন পে-স্কেল ঘোষণা দূরে থাক এ বিষয়ে কোথাও আলোচনাও হচ্ছে না।

এনএইচ