tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৫:১৭ পিএম

দুই ঘণ্টাতেই শেষ প্রাণিসম্পদের দুধ-ডিম-মাংস, ক্রেতাদের ক্ষোভ


dim-20230321161534-20240316145824

পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে নিম্নআয়ের মানুষের কথা বিবেচনায় রাজধানীর ৩০ স্থানে বাজার থেকে কম মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।


রোজার আগের দিন থেকে শুরু হওয়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এ কার্যক্রম চলবে ২৮ রোজা পর্যন্ত। শুরুতে বিক্রি কম হলেও পরিচিতি বাড়ার সাথে সাথে বিক্রি ও চাহিদা বাড়ছে বলেই জানান সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর ও কালশীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ পিকআপ ভ্যানের দুধ-ডিম-মাংস দুই ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। তবে অনেক ক্রেতা প্রাণিসম্পদের এই পাঁচ ধরনের পণ্য কিনতে এসেও খালি হাতে ফিরে গেছেন। ফেরত যাওয়া ক্রেতাদের আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে আসতে বলেছেন প্রাণিসম্পদের কর্মচারীরা।

কালশীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের ক্যাশিয়ার মো. রহিম বলেন, আমরা গরু, খাসি, ব্রয়লার ও খাসির মাংস এবং দুধ ও ডিম বিক্রি করছি। প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকা, খাসি ৯০০ টাকা কেজি এবং ড্রেস্ড ব্রয়লার মুরগী ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এছাড়া, দুধ ৮০ টাকা লিটার এবং ডিম ১১০ টাকা ডজন বিক্রি করছি। রোজার আগের দিন থেকে শুরু হয়েছে আমাদের এই কার্যক্রম। রমজান মাসজুড়েই চলবে আমাদের দুধ-ডিম-মাংস বিক্রির কার্যক্রম। শুরুতে সেল কম হলেও এখন ভালো সেল হচ্ছে। শুরুতে দুধ-ডিম-মাংস বিক্রি করতে বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অপেক্ষা করা লাগতো। কিন্তু এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আনি।

কালশীতে ইয়াকুব নামের এক ক্রেতা প্রাণিসম্পদের এই পণ্য কিনতে এসে খালি হাতে ফিরে গেছেন। তাকে আগামীকাল সকাল ১০টার মধ্যে আসতে বলেছেন প্রাণিসম্পদের কর্মচারীরা।

তিনি বলেন, তাদের (প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর) পণ্যের দাম যে অনেক বেশি কম বিষয়টি সেরকম নয়। তবে যেহেতু সরকারি সেহেতু পণ্যটা খাঁটি হওয়ার কথা। এজন্যই আমি এর আগে দুইবার ও আজকে গরুর মাংস, ডিম ও দুধ নিতে এসেছিলাম। কিন্তু পেলাম না।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা গরুর মাংস বিক্রি করছে ৬০০ টাকা কেজিতে। কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী এই দামে গরুর মাংস বিক্রি করেছে। কয়েকদিন আগে তো সাড়ে ৫শ টাকাও গরুর মাংস কিনেছি। এছাড়া, ব্রয়লার মুরগী ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন তারা। কিন্তু বাজারেও এই একই দামে বা আরও কিছু কম দামে বিক্রি করে। বাজারের সাথে তাদের খাসির মাংসের দেড়শ থেকে ২শ টাকার কম আছে। কিন্তু ডিম বাজারে আজকে ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তারাও ১১০ টাকা ডজন বিক্রি করছে।

কালশীতে ভ্রাম্যমাণ ভ্যানের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তরের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কালশীতে শুরু থেকেই দুধ-ডিম-মাংস বিক্রি করছি। প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে। মিরপুরের অন্যান্য ভ্যানগুলোর চেয়ে কালশীতে চাহিদা বেশি। এজন্য আজকে আমরা এখানে ১০০ কেজি গরুর মাংস, ৫০ কেজি ব্রয়লার, ১০ কেজি খাসির মাংস, ২৪শ ডিম এবং দুধ ১০০ লিটার বিক্রি করেছি। যেমন গতকাল কালশীতে ১৫শ ডিম বিক্রি করলেও আজ ২৪শ বিক্রি করেছি। চাহিদা অনুযায়ী দুধ-ডিম-মাংস আনা হচ্ছে। কারণ বেশি আনলে পচে যাওয়ার সম্ভবনা আছে। বাজারের সাথে আমাদের পণ্যের মান ও দামে তফাৎ আছে বিধায় চাহিদা বাড়ছে বলে জানান তিনি।

এক প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রত্যেকদিন সকালের দিকে আমাদের পণ্যগুলো বিক্রি করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে বিক্রি না হলে বিকেল পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়। সবার আগে গরুর মাংস শেষ হয়। গরুর মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। অনেকে বেশি চায় কিন্তু আমরা দেই না। কিন্তু কেউ চাইলে আর যদি বেশি পরিমাণে থাকে তাহলে দুধ ও ডিম একটু বেশি দেওয়া হচ্ছে।

ক্রেতাদের অভিযোগের বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষের অভিযোগ আছে। সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে একজন ক্রেতা তিন থেকে চার কেজি গরুর মাংস চায়। কিন্তু আমরা তো দিতে পারি না। কারণ আমাদের উদ্দেশ্য তো ওইটা না। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল নিম্নআয়ের মানুষরা যেন রমজানে স্বল্পমূল্যে দুধ-ডিম-মাংস খেতে পারে। কিন্তু অনেক সময় ধনী মানুষরাও আসছে। কারণ, ধনী-গরীব লাইন দাঁড়ালে আমাদের দিতে হয়। সব অভিযোগ গরুর মাংস নিয়ে। সবাই গরুর মাংস বেশি পরিমাণে চায়। আর কোন পণ্য নিয়ে ক্রেতাদের অভিযোগ নেই বলে জানান তিনি।

এর আগে, গত ১০ মার্চ প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে রমজান মাস উপলক্ষ্যে ভ্রাম্যমাণ বাজারে সুলভমূল্যে দুধ, ডিম, মাংস ও মাছ বিপণন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আব্দুর রহমান। ওইসময় মন্ত্রী জানান, প্রথম রমজান থেকে শুরু হয়ে ২৮ রমজান পর্যন্ত দুধ, ডিম ও মাংস বিপণন ব্যবস্থা রাজধানী ঢাকার ২৫টি স্থানে পরিচালিত হবে। এছাড়া, স্থায়ী বাজারসহ আরও পাঁচটি স্থানে মোট ৩০টি পয়েন্টে এই বিক্রয় ব্যবস্থা চালু থাকবে।

ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রগুলো হলো- নতুনবাজার (বাড্ডা), কড়াইল বস্তি (বনানী), খামারবাড়ি (ফার্মগেট), আজিমপুর মাতৃসদন (আজিমপুর), গাবতলী, দিয়াবাড়ী (উত্তরা), জাপান গার্ডেন সিটি (মোহাম্মদপুর), ষাটফুট রোড (মিরপুর), খিলগাঁও (রেল ক্রসিংয়ের দক্ষিণে), সচিবালয়ের পাশে (আব্দুল গনি রোড), সেগুনবাগিচা (কাঁচাবাজার), আরামবাগ (মতিঝিল), রামপুরা, কালসী (মিরপুর), যাত্রাবাড়ী (মানিকনগর গলির মুখে), বসিলা (মোহাম্মদপুর), হাজারীবাগ (শিকশন), লুকাস (নাখালপাড়া), আরামবাগ (মতিঝিল), কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর ১০, কল্যাণপুর (ঝিলপাড়া), তেজগাঁও, পুরান ঢাকা (বঙ্গবাজার) কাকরাইল। আর স্থায়ী পাঁচটি বাজারগুলো হলো; মিরপুর শাহ আলি বাজার, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, নতুন বাজার (১০০ ফুট), কমলাপুর, কাজি আলাউদ্দিন রোড (আনন্দবাজার)।

এনএইচ