tnbd-logo tnbd-logo
tnbd-logo tnbd-logo-light
অর্থনীতি প্রকাশনার সময়: ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০৯ পিএম

রাজধানীর বাজারে ডিম ও ‍কাঁচামরিচের সংকট


kacha-morich-dim

কোনো ঘোষণা ছাড়াই ঢাকা ও চট্টগ্রামে ডিমের আড়তগুলো বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে কৃত্রিম সংকট দেখা দিয়েছে খুচরা বাজারে।


রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল বিকালে গিয়ে খুচরা দোকান খোলা পাওয়া গেছে একটি, যেখানে ডিম ছিল হাতেগোনা। একই সঙ্গে বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে কাঁচামরিচেরও। কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। তাও চাহিদামতো কিনতে পারেননি ক্রেতারা।

রাজধানীতে ডিম বিক্রির অন্যতম বড় পাইকারি বাজার তেজগাঁও আড়ত। দেশের বিভিন্ন স্থানের খামার থেকে ট্রাকে করে এখানে ডিম আসে। এরপর তেজগাঁও থেকে ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ডিম সরবরাহ হয়। ফলে তেজগাঁওয়ে ডিম বিক্রি বন্ধ রাখলে সাধারণত খুচরা বাজারে তার প্রভাব পড়ে। চট্টগ্রামের ডিমের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার পাহাড়তলীতেও আড়তগুলো বন্ধ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে ডিমের ট্রাক আসা বন্ধ রয়েছে রোববার রাত থেকেই। আড়তগুলোয়ও বিক্রি ছিল সীমিত। গতকাল আড়তগুলো পুরোপুরি বন্ধ রাখা হয়। ফলে রাজধানীর বাজারগুলোয় দেখা যায় ডিম সংকট।

তেজগাঁওয়ের ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডিম কিনতে হচ্ছে তাদের। ফলে লাভসহ বেশি দামেই তাদের বিক্রি করতে হয়। অথচ সরকার নির্ধারিত দাম নিশ্চিত করতে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাই জরিমানার ভয়ে তারা ডিম বিক্রি বন্ধ রেখেছেন।

সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফার্মের মুরগির ডিম এবং ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম নির্ধারণ করে দেয়। বেঁধে দেয়া দাম অনুসারে, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের মূল্য ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা হওয়ার কথা। সে হিসাবে খুচরা পর্যায়ে এক ডজন ডিমের দাম হয় ১৪২ টাকা। কিন্তু খুচরা বাজারে এখন ডিম কিনতে হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা ডজনে। নিত্যপণ্যটির এমন উচ্চ দাম বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, ডিম উৎপাদক ও পাইকারি ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেই তারা ডিমের ‘যৌক্তিক দাম’ নির্ধারণ করেছিল।

তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আমানত উল্লাহ বলেন, ‘সরকার খুচরা পর্যায়ে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করেছে, তার চেয়ে বেশি দাম দিয়ে খামারিদের কাছ থেকে আমাদের কিনতে হচ্ছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। রোববার রাতে পাইকারিতে ডিম বিক্রি করেছি প্রতি পিস ১২ টাকা ৫০ পয়সায়। আমরা কিনেছি ১২ টাকা থেকে ১২ টাকা ২০ পয়সা দরে। তেজগাঁওয়ে দৈনিক ১৪-১৫ লাখ ডিম আসে। ঢাকায় ডিমের চাহিদা এক কোটি। তেজগাঁওয়ের বাইরে কিছু জায়গায় অনেকে ঠিকই উচ্চ দামে ডিম বিক্রি করছেন। কিন্তু বাড়তি দামে কেনাবেচার কারণে শুধু আমাদের দায়ী করা হচ্ছে। তাই আমরা আড়ত বন্ধ রেখেছি। এ সমস্যা সমাধানে আমরা ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে মঙ্গলবার (আজ) বৈঠক করব।’

এদিকে সব ধরনের সবজির দামই বেড়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে কাঁচামরিচের দাম। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়, যা সপ্তাহখানেক আগেও ছিল ১৮০-২২০ টাকা। তার মধ্যে বাজারে সংকটও রয়েছে নিত্যপণ্যটির। গতকাল বিকালে কারওয়ান বাজারে অনেক ক্রেতাকেই কাঁচামরিচ না পেয়ে ফিরে যেতে দেখা যায়। তাদের ভাষ্য, গত বছরের জুলাইয়ে কাঁচামরিচের কেজি খুচরা পর্যায়ে হাজার টাকা পর্যন্তও বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু বাজারে সংকট দেখা দেয়নি। এবার বেশি দামে বিক্রি হলেও সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে।

বাজারে কাঁচামরিচ না থাকার বিষয়ে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে গ্রীষ্মকালীন মরিচের প্রায় ৮০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে বাজারে সরবরাহ কমে গেছে এবং দাম বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারে গতকাল বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম। আক্ষেপ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে আমাদের খোঁড়া যুক্তি দিচ্ছেন বিক্রেতারা। এটা সবসময়ের পুরনো যুক্তি—জোগান কম। এবার তার সঙ্গে যুক্ত করেছে অতিবৃষ্টি আর বন্যার অজুহাত। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির কারণে প্রতি বছর কাঁচামরিচের দাম একটু বাড়ে। তবে বাজার থেকে উধাও হয়ে যাওয়া, একদমই বাজারে না থাকা এর আগে কখনো দেখিনি।’

এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় কারওয়ান বাজারে নিত্যপণ্যের দরদাম ও সরবরাহ পরিস্থিতি পরিদর্শন করেন অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘বাজারে ডিমসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে এটা ঠিক। এক্ষেত্রে সিন্ডিকেটের কথা বলে পার পাওয়া যাবে না। তবে বাজারে পণ্যের সরবরাহ যাতে বাড়ে ও দাম কমে আসে সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা স্বীকার করছি যে পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে দাম বাড়ার কারণও আছে। চাহিদার তুলনায় পণ্যের সরবরাহ কম। বাজারে বর্তমানে সবজিপণ্যের সরবরাহে বেশ সংকট রয়েছে। কারণ সবজির উৎপাদন কমেছে। গত কয়েকটি বন্যা ও টানা বৃষ্টিতে অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। এখন উৎপাদন ও সরবরাহ কম থাকলে যতই বাজার তদারকি করা হোক, দাম খুব কমিয়ে আনা যাবে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব ভোক্তাদের কষ্টটা লাঘব করা যায়। উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তা পর্যায়ে দামের ব্যবধানটা যেন সহনীয় থাকে, সে লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। আমাদের দিক থেকে কোনো গাফিলতি নেই।

সিন্ডিকেটের বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা ব্যবসা করেন, তারা লোকসান করুক, সেটা চাই না। তবে অতি মুনাফা করবেন তা–ও ঠিক না। ব্যবসায়ীদের অনেকে অত্যধিক মুনাফা করেন। সিন্ডিকেট যেন না হয় সেই চেষ্টা করা হবে।’

ডিমের মূল্যবৃদ্ধির জন্য সরবরাহ সংকটকে বড় কারণ দাবি করে উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের দৈনিক ডিমের চাহিদা প্রায় সাড়ে চার কোটি পিস। আগে দিনে সাড়ে চার-পাঁচ কোটি পিসের মতো ডিম উৎপাদন হতো। বর্তমানে তিন কোটির বেশি উৎপাদন নেই। এখন ডিম কি মেশিন দিয়ে তৈরি করব নাকি? এটা তো চকোলেটের মতো কোনো পণ্য না যে কারখানায় চট করে বানিয়ে ফেলা যাবে। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এরই মধ্যে আমরা বসেছি। এ সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আবারো বসা হবে। পাশাপাশি ভারত থেকেও ডিম আমদানির অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমরা বাজার স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্টা করছি।’

সরকারের এ উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘অনেকে বলার চেষ্টা করছে যে কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না, সব জিনিসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এমনভাবে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে যে বাংলাদেশ যেন আফ্রিকার কোনো দেশের মতো হয়ে গেছে। এসব বার্তা স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করে।’

এফএইচ