জানা যায়, গত সোমবার ঈদের ছুটিতে একুশে পরিবহনে বাড়ি ফিরছিলেন নোয়াখালীর ৪০ জন যাত্রী। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসটি কুমিল্লার লালমাই এলাকায় পৌঁছালে কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে এক দল উশৃঙ্খল তরুণ বাসটিকে থামার সংকেত দেয়। কিন্তু যাত্রীরা বুঝতে পারে মোটরসাইকেলগুলোতে নম্বর প্লেট নেই এবং ভেবে নেয় এটি ডাকাতদলের হামলা। চালক সোহেলও বুঝতে পারে বিষয়টি। তাই বাসটি না থামিয়ে চালিয়ে যাওয়ায় বেপরোয়া হয়ে যায় তরুণরা। এক পর্যায়ে সামনে থেকে তরুণরা চালককে লক্ষ করে ইট নিক্ষেপ করতে শুরু করে। একটি ইট গ্লাস ভেঙে চালকের চোয়ালে এসে পড়ে। তারপর শুরু হয় রক্তক্ষরণ। কিন্তু সেই অবস্থায়ও গাড়ি চালাতে থাকে চালক সোহেল। পাশাপাশি মোটরসাইকেলে বাসটিকে তাড়া করতে থাকে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন যাত্রীরা। তবুও আপ্রাণ চেষ্টা করে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে আসেন সোহেল। ফলে প্রাণে রক্ষা পায় ৪০ জন যাত্রী।

বাসটির মালিক জহিরুল ইসলাম তারেক বলেন, সেদিন চালক সোহেলের সাহসিকতার জন্য বাসভর্তি যাত্রী রক্ষা পায়। তারপর থেকে সে নোয়াখালী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে। তার চিকিৎসার খরচ আমি চালাচ্ছি। তার সাহসিকতার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।

চালক রাকিব হোসেন সোহেল বলেন, সেদিন আমাকে ধাওয়া করলে আমি যাত্রীদের কথা চিন্তা করে গাড়ি চালিয়ে যাই। কিন্তু যাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আমার চোয়াল ভেঙে রক্তাক্ত হয়ে যায়। তারপরও আমি সবার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নোয়াখালী চালিয়ে নিয়ে আসি।

নোয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রাজীব আহমেদ বলেন, সোহেলের মাথা ও চোয়ালে ৩১টি সেলাই লেগেছে। নিচের পাটির দুটি দাঁত ভেঙে গেছে। তবে তার অবস্থা এখন উন্নতির দিকে। চিকিৎসকরা নিয়মিত তার খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. ইয়াসীন চালক রাকিব হোসেন সোহেলকে দেখতে ও চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে তার প্রতিনিধি দলকে প্রেরণ করেন। শনিবার (৫ এপ্রিল) বিআরটিএ নোয়াখালী সার্কেলের মোটরযান পরিদর্শক মাহবুব রাব্বানী, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সুজিত রায় চালক সোহেলের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়ার নেন এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন।

এদিকে ঘটনাটি ডাকাতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. খায়রুল। তিনি বলেন, হামলাকারীরা ডাকাত নন। ঘটনাস্থলের একটি দোকানের সামনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ঈদের দিন রাতে দোকানের সামনে একদল তরুণ ঈদ উদযাপন করছেন। এ সময় তাদের মোটরসাইকেলকে সাইড না দিয়ে একুশে পরিবহনের বাসটি চালানো হচ্ছিল। তারা বাসটি থামাতে চাইলে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে যেতে থাকেন চালক। এ অবস্থায় ৮-১০টি মোটরসাইকেলের আরোহীরা বাসটিকে ধাওয়া করেন। এ ঘটনার তদন্ত করার বা মামলা করার কোনো এখতিয়ার হাইওয়ে পুলিশের নেই।

এনএইচ