শুক্রবার (২ মে) সকালে মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দীক ধর্ষণ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নের সিঙ্গিকুড়া গ্রামের মুদি দোকানি মো. ইউনুস মুন্সির (৬০) সঙ্গে প্রতিবেশী এক অটোচালকের স্ত্রীর দীর্ঘদিন থেকে পরকীয়ার সম্পর্ক চলে আসছে। এরই জেরে ইউনুস মিয়াকে হাতেনাতে ধরতে গত ২৩ এপ্রিল অটো নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর ওই মহিলার স্বামী বিকল্প পথে এসে বাড়ির পাশে লুকিয়ে অবস্থান নিয়ে হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করলে অভিযুক্ত ইউনুস মুন্সি জানালা দিয়ে পালিয়ে যান।

এদিকে আগে থেকেই অটোচালকের ভাতিজা রাকিবুল ইসলাম শোয়ার ঘরের আড়ালে লুকিয়ে মোবাইলে ভিডিও চালু রাখায় এই ঘটনার একটি ভিডিও পরবর্তীতে পাওয়া যায়। ভিডিওতে দেখা যায়, নিঃশব্দে অটোচালকের শোয়ার ঘরে প্রবেশ করেন ইউনুস। এ সময় অটোচালকের স্ত্রী জেগে থেকে তার ঘুমন্ত শিশুর দিকে ও ইউনুসের দিকে তাকাচ্ছেন। ওই নারীর খাটের আশেপাশে বেশ কিছুক্ষণ অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি ঘোরাফেরা করেন। তারপরেই ভিডিওর আড়ালে চলে যান। ভিডিওতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে শোয়ার ঘরে প্রবেশ করার পর ওই নারীকে স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে। জোরপূর্বক ধর্ষণের কোনো আলামত ভিডিওতে দেখা যায়নি।

এদিকে ওই নারীর অটোচালক স্বামী বাদী হয়ে মিঠাপুকুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় গত ১৮ এপ্রিল ওই নারীকে ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে জোরপূর্বক ধর্ষণের অভিযোগ আনয়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাউকে না বলার শর্তে ২৩ এপ্রিল ধর্ষণচেষ্টার সময় ভুক্তভোগী নারীর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে ধর্ষক পালিয়ে যান বলে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে পায়রাবন্দের শিঙ্গীকুড়া জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি সেকেন্দার জানান, এখানে ধর্ষণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। পরিকল্পিতভাবে ইউনুস মুন্সিকে ফাঁসিয়ে জরিমানা আদায় করার চেষ্টা করছে ওরা। কয়েকদফা বসা হয়েছিল। তারা থানার এক দালালসহ বসে আমাক বলল আপনি মীমাংসা করে দেন। ৩ লাখ টাকা হলে মীমাংসা হবে। শেষমেশ দেড় লাখ টাকা চেয়েছিল। পরে টাকা না পেয়ে থানায় মামলা করেছে। আর উল্টো পাল্টা তথ্য দিয়ে দোকানি ইউনুসকে ইমাম ইউনুস বানিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করছে। এখন টাকা দিলে ওরা মীমাংসা করবে। যেখানে অপরাধে হয়নি, সেখানে কী মীমাংসা করবো? আমরা ন্যায় বিচার চাই।

মামলার বাদী ওই নারীর অটোচালক স্বামী জানান, আমার বউ সরল মহিলা। পেটে কোনো কথা থাকে না। বোকাসোকা জন্য আমার ৭ মাসের বউকে ভয় দেখিয়ে ধর্ষণ করে। আবার কাউকে না বলার হুমকি দিয়েছে। ভিডিওতে জোরাজোরি ও ধর্ষণ চেষ্টার ফুটেজ নেই প্রশ্ন করলে তিনি জানান, ঘরে ঢোকামাত্রই আমরা আড়ালে থেকে ধরার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ধর্ষক ইউনুস বুঝতে পেরে পালিয়ে যান। আমার বউয়ের মাথায় একটু সমস্যা। তাই সুযোগ নিয়ে ওই দোকানি ধর্ষণ করেছে।

স্থানীয় শরিফুল ইসলাম জানান, ভিডিওতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, কোনো ধর্ষণচেষ্টা হয় নাই। তারপরেও ওরা মামলায় বলেছে সেদিন ধর্ষণচেষ্টা হয়েছে। খুব বেশি হলে পরকীয়ার কোনো ঘটনা হতে পারে। ধর্ষণের ঘটনা পুরোটাই বানোয়াট। তারা কয়েক দফায় থানার দালালসহ জরিমানা দাবি করছিল। দোকানি ইউনুসের বাড়ির লোক টাকা দেয় নাই। এজন্য ধর্ষণ মামলা করেছে।

মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দীক জানান,এ ঘটনায় মিঠাপুকুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।

এনএইচ