মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মৎস আহরণে যে কোন ধরনের জাল ফেলা, মাছ ধরা, মজুদ ও পরিবহণ করা অবৈধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।
ইলিশের প্রজনন ও বংশবিস্তারের এ দু’মাস মাছ ধরা হতে জেলেদের বিরত রাখতে স্থানীয় মৎস বিভাগ ও কোস্টগার্ডকে পাহারাদার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
ভর্তুকি হিসেবে নদীতে মাছ শিকারে বিরত থাকা জেলেদের প্রতিমাসে ৪০ কেজি করে চাল বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার।
অভিযোগ রয়েছে, সরকার জেলেদের চালের ভর্তুকি ও মৎস বিভাগ এবং কোস্টগার্ড সদস্যদের নিযুক্ত রেখে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করলেও প্রকৃতপক্ষে মৎস সম্পদ রক্ষা হচ্ছে না। বরং প্রশাসনের ছত্রছায়ায় দেদারসে চলছে জাটকা ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছ ধরার মহোৎসব। এতে মওসুমে ইলিশের চাহিদা পূরণে ঘাটতি হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। এছাড়া ধ্বংস হচ্ছে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা প্রজাতির মাছের পোনা ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, রামগতি বড়খেরী নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি থেকে মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যে মেঘনা নদীতে প্রকাশ্য দিবালোকে অবৈধ বিহুন্দি জাল দিয়ে জেলেরা অবাধে ইলিশের পোনাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করছে। আহরিত জাটকা ইলিশ ও অন্যান্য মাছ স্থানীয় মাছঘাট ও বিভিন্ন হাট বাজারে প্রকাশ্য বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মেঘনা নদীর সেন্টারখাল মাছঘাট, আসলপাড়া লঞ্চঘাট, বয়ারচর, টাংকির ঘাট, ওছখালী গাবতলী, চর গজারিয়া হুজুরের খাল ও ওয়াপদাবাজার মাছঘাট এলাকায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জেলেরা নদীতে অনেকটা উৎসবমুখর পরিবেশে ২-৫ ইঞ্চি সাইজের ইলিশের পোনা ‘জাটকা’ আহরণ করছে।
স্থানীয়রা ও জেলেদের অভিযোগ, মাছ শিকারিদের সিন্ডিকেটে থাকা অসাধু জেলেদের প্রত্যকের কাছ থেকে মাসিক ও দৈনিক চুক্তিতে মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে নদীতে মাছ শিকারের সুযোগ করে দিচ্ছেন সিন্ডিকেট সদস্যরা। অবৈধভাবে আদায় করা ওই টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেন তারা।
এ ব্যাপারে জেলা টাস্কফোর্সের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছেন স্থানীয়রা।
এছাড়া আলেকজান্ডার সেন্টারখাল মাছঘাট এলাকায় সেভেনস্টার নামের একটি গ্রুপ নিষেধাজ্ঞা ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিষিদ্ধ জাল দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করেন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৌরভ-উজ জামান অভিযানে নিজের ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে বলেন, লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় নদীতে ঠিকমতো অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া রাতে নৌ-পুলিশ ও কোস্টগার্ড নিস্ক্রিয় থাকে। দিনে একদিকে অভিযান পরিচালনা করলে অন্যদিকে জেলেরা মাছ শিকার করেন।
অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে জেলেরা নদীতে মাছ শিকার করার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরনের বিচ্ছিন্ন দু-একটা ঘটনা থাকতে পারে। তবে এ লেনদেনের সঙ্গে মৎস্য অফিস জড়িত নয় বলে দাবি করেন তিনি।
কোস্টগার্ড রামগতি ক্যাম্পের কন্টিনজেন্ট কমান্ডার (সিসি) মো. শামীম জানান, ঈদের আগের দিন তিনি অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটা বাধা জাল পুড়িয়ে ধ্বংস করেছেন। দিনে অভিযান চালালেও রাতে মাছ শিকারে যান জেলেরা। এছাড়া জনবল সীমিত থাকায় পুরোপুরি অভিযান সফল করা সম্ভব হচ্ছে না।
অভিযুক্ত বড়খেড়ী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ শফিকুল ইসলামের মন্তব্য পেতে শনিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। খুদে বার্তা পাঠালেও তিনি জবাব দেননি।
অভিযোগের বিষয়ে নৌপুলিশ চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, মেঘনায় অভায়াশ্রমে অভিযান চলাকালীন মেঘনা নদীর চাঁদপুরের ষাটনল থেকে রামগতির চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের জাল ফেলা ও মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এ সময়ে কেউ নদীতে মাছ শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
তবে ফাঁড়ি ইনচার্জ শফিকুল ইসলামের বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এনএইচ