যা-ই হোক, শরীর আছে মানে রোগ-বালাইও আছে এবং থাকবে। তবে কিছু কিছু রোগ আছে, যা একবার শরীরে বাসা বাঁধলে তা থেকে মুক্তিলাভ কঠিন হয়ে পড়ে। এমনই একটি চর্মরোগ স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া। বর্তমানে এ রোগের প্রাদুর্ভাব ব্যাপক, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়া ত্বকের সংক্রামকজনিত একটি অস্বস্তিদায়ক রোগ। এজন্য দায়ী সারকপটিস স্ক্যাবি নামক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু। এ রোগ যে কোনো বয়সী মানুষের হতে পারে। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে বেশি হতে দেখা যায় এবং অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় এ সময় অনেক বেশি ছড়িয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে যারা আবাসিক স্কুলের শিক্ষার্থী, তাদের মধ্যে রোগটি বেশি ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ রোগে চামড়ার ওপর প্রথমে রস ও পরে পুঁজযুক্ত ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। শুরুতে আক্রান্ত স্থানে খুবই বেশি চুলকাতে থাকে। তবে দিনের তুলনায় রাতে চুলকানি তীব্রতা ভয়বহ আকার ধারণ করে। ত্বকের অন্যান্য সমস্যা, যেমন- অ্যালার্জি, ভাইরাস বা ছত্রাক সংক্রমণ থেকে পাঁচড়া আলাদা। এই জীবাণু মানুষের ত্বকের ঠিক নিচের অগভীর স্তরে বাস করে।

খোসপাঁচড়ার লক্ষণ : পাঁচড়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হচ্ছে প্রচুর চুলকানি এবং ত্বকের ওপরে ফোসকা পড়া বা লাল হয়ে ফুলে যাওয়া। সাধারণত আঙুলের ফাঁকে এবং ত্বকের ভাঁজের মধ্যে বেশি হয়।

লক্ষণের সময় : যদি কারও একবার পাঁচড়া হয়, তা হলে পুনরায় এটি হলে লক্ষণ কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ পায়। যাদের আগে কখনো হয়নি, তাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগে।

ছোঁয়াচে রোগ : রোগটি ভীষণ ছোঁয়াচে ও সহজে সারতে চায় না। তাই সতর্কতা ও চিকিৎসা প্রয়োজন।

যেভাবে ছড়ায় : এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। সাধারণত একই বিছানায় শোয়া বা ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে থাকলে এটি হতে পারে। একই কাপড় বা তোয়ালে ব্যবহার করলে, রোগটি ছড়িয়ে পড়ে। একই পরিবারে, স্কুলে, হোস্টেলে রোগটির প্রাদুর্ভাব অনেকের মধ্যে একসঙ্গে দেখা দেয়।

যেভাবে প্রতিরোধ করতে হবে : আক্রান্ত শিশুকে বাকিদের থেকে আলাদা রাখতে হবে। আক্রান্ত শিশুর ব্যবহারের সব কাপড় ধুয়ে দিতে হবে। যেসব জিনিস ধোঁয়া যায় না, যেমনÑ লেপ, তোষক ইত্যাদি। সেগুলো কড়া রোদে দিতে হবে। যাদের খোচপাঁচড়া আছে, তাদের থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চালাতে হবে।

চিকিৎসা না করালে যা হতে পারে : স্ক্যাবিসের আক্রমণে তীব্র চুলকানি হয় আর এর ফলে ত্বকে চুলকানি ও ক্ষতি হয়। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তা হলে এই আক্রমণ বছরের পর বছর চলতে থাকবে এবং অন্যদের আক্রান্ত করবে। মহামারীর মতো ছড়াতেও পারে।

চিকিৎসা : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সঠিক ডোজে পার্মেথ্রিন, মনোসালফিরাম শরীরে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ডা. মো. আতিকুর রহমান

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

এমএম