সাবেক আইজিপি ও র্যাব ডিজিসহ ৬২ জনকে এবার পদক দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে পদক পাওয়া কর্মকর্তাদের তালিকা চূড়ান্ত করেছে পুলিশ সদর দফতর। ওইদিন বিশেষ দরবার অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদক পরিয়ে দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
তবে অন্যবারের মতো এবার ঢাকঢোল পিটিয়ে জাঁকজমকভাবে পুলিশ সপ্তাহ উদযাপন করা হবে না। অনুষ্ঠান সূচিতে ব্যাপক কাটছাঁট করা হয়েছে। অতীতের মতো রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে কুচকাওয়াজ (প্যারেড) হবে না। হবে না রাষ্ট্রপতির সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের বৈঠক। পুলিশ সপ্তাহ-২৫ সামনে রেখে সব ধরনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে পুলিশ সদর দফতর। এই নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ (আইজিপি) ঊর্ধ্বতনরা দফায় দফায় বৈঠক করে চলেছেন।
পুলিশ সদর দফতরের উপ-মহাপরিদর্শক (কনফিডেন্সিয়াল) কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে তালিকায় যারা চূড়ান্ত ২৭ এপ্রিল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মাঠে তাদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে পুলিশ ও রাষ্ট্রপতি পদক নিয়ে আগের মতোই জোরালো তদবির হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পদক পেতে অতিরিক্ত আইজিপি থেকে শুরু করে কনস্টেবলরা ইউনিট প্রধানসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তাদের কাছে তদবির করেছেন। এছাড়াও যোগ্য বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ সদরদফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্তিতিতে এবার পুলিশ সপ্তাহ করার পরিকল্পনা ছিল না। এরপরও পুলিশের মাঠ পর্যায়ের কিছুটা চাপেই পুলিশ সপ্তা করতে হয়েছে। নানা প্রতিকূলতার কারণে পুলিশ সপ্তাহ করতে সময় নেওয়া হয়েছে। যারা ভালো কাজ করবেন, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। আগের মতো মুখ দেখে বা তদবিরে পদক দেওয়া হবে না। পদকের সংখ্যাও কমিয়ে আনা হয়েছে।
জানা গেছে, এবারের পুলিশ সপ্তাহে যে দাবিগুলো উত্থাপন করা হবে তা হলো স্বাধীন পুলিশ কমিশন, এক মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ ভাতা, পুলিশের যানবাহন বৃদ্ধিকরণ, মৃতদেহের দাফন/সৎকারের সুবিধার্থে পুলিশের অনুকূলে আর্থিক বরাদ্দ প্রদান, পুলিশের অবকাঠামো উন্নয়ন, স্বতন্ত্র সাইবার ইউনিট প্রতিষ্ঠা, পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালে জনবল বৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জামাদি সরবরাহসহ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা, নারী পুলিশবান্ধব কর্মপরিবেশ বিনির্মাণ, ভূমিবিরোধ, বালু-জলমহাল ও হাটবাজার ইজারা এবং পরিবেশ আইন সংশ্লিষ্ট অপরাধ প্রতিরোধসহ বিবিধক্ষেত্রে সৃষ্ট আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অতিরিক্ত কর্মঘণ্টা ব্যয় সংকোচনের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক আইন/নীতিমালা থাকা প্রয়োজন, একই পদে দীর্ঘদিন চাকরি করার পর অবসরকালে সুপারনিউমারারি/অফিসিয়িটিং পদোন্নিত প্রদান (কনস্টেবল থেকে ইন্সপেক্টর পর্যন্ত), ডিজিটালাইজড পুলিশি ব্যবস্থা প্রবর্তন ও পুলিশের দ্বি-স্তর বিশিষ্ট নিয়োগের প্রচলন করতে হবে।
৬২ জনের নাম চূড়ান্ত : সাবেক আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম, র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান, অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) আবু নাছের মোহাম্মদ খালেদ, অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) মো. আকরাম হোসেন, অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) খোন্দকার রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, অ্যাডিশনাল আইজিপি (চলতি দায়িত্ব) মো. ছিবগাত উল্লাহ, অ্যাডিশনাল আইজিপি (চলতি দায়িত্ব), মো. মাইনুল হাসান, উপ-মহাপরিদর্শক সরদার নুরুল আমিন, উপ-মহাপরিদর্শক কাজী মো. ফজলুল করিম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবীব পলাশ, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, জিএমপি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদুল হাসান, ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভূইয়া, অতিরিক্ত ডিআইজি আহম্মদ মুঈদ, পিবিআইর অতিরিক্ত ডিআইজি এনায়েত হোসেন মান্নান, খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল, ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান, মাগুরার এসপি মিনা মাহমুদা, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু, পিবিআইর পুলিশ সুপার মো. কুদরত-ই খুদা, ৮ এপিবিএনের এসপি খন্দকার ফজলে রাব্বি, ডিএমপির উপপুলিশ কমিশনার রওনক আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম, এম, মোহাইমেনুর রশিদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রাসেল, নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ, ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. জুয়েল রানা, ডিএমপির সহকারী পুলিশ সুপার এম জে সোহেল, দোহার সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-০১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. রাশেদুল ইসলাম বিশ্বাস, এপিবিএন উত্তরার পুলিশ পরিদর্শক গাজী গোলাম কিবরিয়া, পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্সপেক্টর আবদুর রাজ্জাক আকন্দ, সিএমপির ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী, কেএমপির ইন্সপেক্টর শফিকুল ইসলাম, আশুলিয়া থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু, আলমডাঙ্গার ওসি মুঃ মাসুদুর রহমান, সিরাজগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখা পুলিশ পরিদর্শক মো. একরামুল হোসাইন, কাউনিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোস্তফা কামাল, পাবনা জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই শ্রী বেনু রায়, গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের এসআই সুমন মিয়া, গোদাগাড়ী মডেল থানা এসআই বরুন কুমার সরকার, কুমিল্লা জেলা পিবিআইর এসআই ফিরোজ আহাম্মদ, হবিগঞ্জ জেলার এসআই মাহমুদুল হাসান, মির্জাগঞ্জ থানার এসআই এনামুল হক, সিএমপির সোয়াট টিম কাউন্টার টেরোরিজম বিভাগের এসআই রাছিব খান, পুলিশ সদর দপ্তরের এসআই রকিবুল হাসান, ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের এসআই ইমরান আহমেদ, সিরাজগঞ্জ জেলা পিবিআইয়ের এসআই মো. আশিকুর রহমান, মুন্সীগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই ইয়াসিন, খাগড়াছড়ি থানার এসআই আজিমুল হক, ঢাকার স্পেশাল ব্রাঞ্চে এএসআই কামরুজ্জামান, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল নিযুক্ত এএসআই নাজমুল হুসাইন, ভাটারা থানা এএসআই মেসবাহ উদ্দিন, র্যাব-১৫ এর হাবিলদার মো. সাইফুল ইসলাম, সচিবালয় নিরাপত্তা বিভাগের কনস্টেবল মো. রুহুল আমিন ভূঞা, ঢাকা এটিইউর কনস্টেবল হাবিবুর রহমান, পুলিশ সদর দপ্তরের কনস্টেবল মোহাম্মদ জোনাইদুল হক, ডিএমপির পরিবহন বিভাগের কনস্টেবল মোবারক হোসেন ও ডিএমপির পিওএম-পূর্ব বিভাগের কনস্টেবল রিয়াদ হোসেন।
এদিকে পতিত হাসিনা সরকারের আমলে ২০২৪ সালে পুলিশ সপ্তাহের ইতিহাসে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ পদক দেয়া হয়েছিল। গতবার পদক দেয়া হয় ৪০০ পুলিশ সদস্যকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ভূমিকা রাখায় চিহ্নিত কতিপয় পুলিশ সদস্যকে বেছে বেছে পদক দেয়া হয়। তখন এসব পদক নিয়ে চরম বিতর্ক সৃষ্টি হয়। অসীম সাহসিকতা, বীরত্বপূর্ণ কাজ, মামলার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা প্রদর্শন, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের জন্য পদক দেওয়ার কথা থাকলেও বিগত আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় পুলিশ পদক দেয়া হয়ছে। যোগ্যতম পুলিশ সদস্যরা ছিলেন বঞ্চিত।
সূত্র মতে, ২০২৪ এর আগে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদক দেওয়া হয় ২০১৮ সালে। ওই বছরও পদক দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়। ওই সময় ৩৪৯ জনকে পদক দেওয়া হয়। ২০২১ থেকে ২০২৩-এই তিন বছর বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয় ১৫টি করে। ২০১৯ সালে এই পদকের সংখ্যা ছিল ১১৮টি। এছাড়া ২০১৭ সালে ১৮২, ২০১৬ সালে ১৩২, ২০১৫ সালে ১০২, ২০১৪ সালে ৮৬, ২০১৩ সালে ২০ এবং ২০১২ সালে ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে এই পদক দেওয়া হয়।