বিপুল সম্ভাবনাময় বাজার তৈরি করতে পারলে দেশের অর্থনীতিতে পরিবর্তন আসবে পাশাপাশি বিশ্বের বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুসঙ্গত হবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। ভারতও প্রতিবেশি দেশ হিসেবে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারত ছাড়া বাংলাদেশ অচল সেটা ভাবা ঠিক হবে না।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশ প্রচুর সম্ভাবনাময় দেশ। এদেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। যা বহির্বিশ্বে অনেক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ যা রুপালী ইলিশ নামে খ্যাত। তা বিদেশে রপ্তানি করেই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা সম্ভব।
ইতোমধ্যে গত অক্টোবরে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ উপদেষ্টা ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে সে আগ্রহের কথা জানান বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ‘রূপালি ইলিশ’ আমদানি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে চীন। ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সচিবালয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার ও বন্ধুত্বপ্রতীম দেশ। অধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও চীনের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদার করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশে কৃষি, পরিবহন, কৃষি-যন্ত্রপাতি ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে চীনা বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য ব্যবধান বিশাল। তিনি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধি এবং আমদানিকৃত পণ্যের ওপর সকল ধরনের শুল্ক হ্রাস করার আহ্বান জানান।
বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে শেখ বশির উদ্দিন বলেন, এ দেশে ট্রাক উৎপাদন কারখানা স্থাপন এবং কৃষির আধুনিকীকরণে বিনিয়োগ উভয় দেশের জন্যই সুফল বয়ে আনবে।’
চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ৩০টি চীনা কোম্পানি চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছেন। চীনে বাংলাদেশি ইলিশ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইলিশ মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর সুযোগ রয়েছে।
এ সময় প্রাথমিকভাবে ১ হাজার টন ইলিশ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেন রাষ্ট্রদূত। তিনি আরও উল্লেখ করেন, চীন বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানি করতে এবং বাংলাদেশে এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।
বাংলাদেশ ও চীনের সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধিতে সন্তোষ প্রকাশ করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্য চীনের বাজারে শুল্কমুক্তভাবে রপ্তানিতে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করতে পারে।
এর আগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে উদেষ্টার সঙ্গে তার অফিস কক্ষে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। এ সময় শুল্কমুক্ত পণ্য প্রবেশ বিষয়ে মন্তব্য করেন ফরিদা আখতার। সাক্ষাতে সামুদ্রিক মাছের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ ও রপ্তানিতে চীনের আগ্রহ উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে চীনের বিনিয়োগকারীরা সামুদ্রিক মাছ প্রক্রিয়াকরণ কারখানা তৈরি করে চীনে রপ্তানি করতে চায়।’
এ সময় দুই দেশ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে একসঙ্গে কাজ করতে ঐকমত্যে পৌঁছায় বলে জানায় মৎস্য ও প্রাণিসম্প মন্ত্রণালয়।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন জানান, চীনে বাংলাদেশের ইলিশ মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে তারা ১,০০০ টন ইলিশ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া, চীন বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল ও পেয়ারা আমদানির পাশাপাশি এসব খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে চায়।
তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে ৩০টি চীনা কোম্পানি চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সমৃদ্ধ করবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের ডাইরেক্টর জেনারেল (ডিজি) ড. মো. আব্দুর রউফ বলেন, চীন বাংলাদেশ থেকে ইলিশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ বিষয়ে উপদেষ্টা মহোধয়ের সাথে বৈঠকও হয়েছে। যদিও অফিসিয়ালী আমাদের কাছে এখনও কোনো আদেশ আসেনি।
ডিজি বলেন, ইলিশ ছাড়াও আরও অনেক সেক্টরে চীন আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চাচ্ছে। চিংড়ি কোলেষ্টরেল ফ্রি অনেক খাবার আছে সেগুলো নিয়েও চীন কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ সে বিষয়গুলো পর্যালোাচনা করছে।
এমএম